পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উদ্‌যোগপর্ব
৩৬৫

 এই সময়ে অম্বার মাতামহ রাজর্ষি হোত্রবাহন সেই তপোবনে উপস্থিত হলেন। সমস্ত ঘটনা শুনে তিনি অম্বাকে বললেন, তুমি আমার কাছে থাক, তোমার অনুরোধে জামদগ্ন্য পরশুরাম ভীষ্মকে বধ করবেন, তিনি আমার সখা। এমন সময়ে পরশুরামের প্রিয় অনুচর অকৃতব্রণ সেখানে এলেন। সব কথা শুনে তিনি অম্বাকে বললেন, তুমি কিরূপ প্রতিকার চাও? যদি ইচ্ছা কর তবে পরশুরামের আদেশে শাল্বরাজ তোমাকে বিবাহ করবেন; অথবা যদি ভীষ্মকে নির্জিত দেখতে চাও তবে পরশুরাম তাঁকে যুদ্ধে পরাস্ত করবেন। অম্বা বললেন, ভগবান, শাল্বের প্রতি আমার অনুরাগ না জেনেই ভীষ্ম আমাকে হরণ করেছিলেন, এই বিবেচনা ক’রে আপনিই ন্যায় অনুসারে বিধান দিন। অকৃতব্রণ বললেন, ভীষ্ম যদি তোমাকে হস্তিনাপুরে না নিয়ে যেতেন তবে পরশুরামের আজ্ঞায় শাল্ব তোমাকে মাথায় তুলে নিতেন; অতএব ভীষ্মেরই শাস্তি হওয়া উচিত।

 পরদিন অগ্নিতুল্য তেজস্বী পরশুরাম শিষ্যগণে পরিবেষ্টিত হয়ে আশ্রমে উপস্থিত হলেন। রূপবতী সুকুমারী অম্বার কথা শুনে পরশুরাম দয়ার্দ্র হয়ে বললেন, ভাবিনী, আমি ভীষ্মকে সংবাদ পাঠাব, তিনি আমার কথা রাখবেন[১]; যদি অন্যথা করেন তবে তাঁকে আর তাঁর অমাত্যগণকে যুদ্ধে বিনষ্ট করব। আর তা যদি না চাও তবে আমি শাল্বকেই আজ্ঞা করব। অম্বা বললেন, ভৃগুনন্দন, শাল্বের প্রতি আমার অনুরাগ জেনেই ভীষ্ম আমাকে মুক্তি দিয়েছিলেন, কিন্তু শাল্ব আমার চরিত্রদোষের আশঙ্কায় আমাকে নেন নি। আপনি বিচার করে দেখুন কি করা উচিত। আমার মনে হয় ভীষ্মই আমার বিপদের মল, তাঁকেই আপনি বধ করুন। পরশুরাম সম্মত হলেন এবং অম্বা ও ঋষিগণের সঙ্গে কুরুক্ষেত্রে সরস্বতী নদীর তীরে এলেন।

 তার পর ভীষ্ম বললেন, তৃতীয় দিনে পরশুরাম দূত পাঠিয়ে আমাকে আহ্বান করলেন। আমি ব্রাহ্মণ ও পুরোহিতগণের সঙ্গে সত্বর তাঁর কাছে গেলাম এবং একটি ধেনু উপহার দিলাম। তিনি আমার পূজা গ্রহণ ক’রে বললেন, ভীষ্ম, তুমি অম্বাকে তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে নিয়ে এসে আবার কেন তাঁকে পরিত্যাগ করলে? তোমার স্পর্শের জন্যই শাল্ব তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছেন, অতএব আমার আদেশে তুমি এঁকে গ্রহণ কর। আমি পরশুরামকে বললাম, ভগবান, আমার ভ্রাতা বিচিত্র বীর্যের সঙ্গে এঁর বিবাহ দিতে পারি না, কারণ পূর্বেই শাল্বের প্রতি এর অনুরাগ হয়েছিল এবং আমি মুক্তি দিলে ইনি শাল্বের কাছেই গিয়েছিলেন। ভৃগুনন্দন,

  1. অর্থাৎ তোমাকে বিবাহ করবেন।