পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৬৬
মহাভারত

আপনি আমাকে বাল্যকালে অস্ত্রশিক্ষা দিয়েছিলেন, আমি আপনার শিষ্য, তবে আমার সঙ্গে যুদ্ধ করতে চান কেন? পরশুরাম ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন, তুমি আমাকে গুরু ব’লে মানছ অথচ আমার প্রিয়কার্য করছ না। তুমিই এঁকে গ্রহণ করে বংশরক্ষা কর।

 তাঁর আজ্ঞাপালনে আমাকে অসম্মত দেখে পরশুরাম বললেন, আমার সঙ্গে যুদ্ধ করবে এস, আমার বাণে তুমি নিহত হবে, গৃধ্র কঙ্ক ও কাক তোমাকে ভক্ষণ করবে, তোমার মাতা জাহ্নবী তা দেখবেন। তার পর কুরুক্ষেত্রে পরশুরামের সঙ্গে আমার ঘোর যুদ্ধে আরম্ভ হ’ল, ঋষি ও দেবতারা সেই আশ্চর্য যুদ্ধ দেখতে এলেন। আমার জননী গঙ্গা মূর্তিমতী হয়ে আমাকে ও পরশুরামকে নিরস্ত করতে এলেন, কিন্তু তাঁর অনুরোধ বিফল হ’ল। আমি পরশুরামকে বললাম, ভগবান, আপনি ভূমিতে আছেন, আমি রথে চ’ড়ে আপনার সঙ্গে যুদ্ধ করতে ইচ্ছা করি না। আপনি কবচ ধাবণ ক’রে রথারোহী হয়ে যুদ্ধ করুন। পরশুরাম সহাস্যে বললেন, মেদিনী আমার রথ, বেদ সকল আমার বাহন, বায়ু আমার সারথি, বেদমাতারা আমার কবচ। এই ব’লে তিনি বাণবর্ষণ করতে লাগলেন। তখন আমি দেখলাম, নগরের ন্যায় বিশাল দিব্যাশ্বযুক্ত বিচিত্র রথে তিনি আরূঢ় রয়েছেন, তাঁর অঙ্গে চন্দ্রসূর্যচিহ্নিত কবচ, অকৃতব্রণ তাঁর সারথি।

 বহুদিন ধ’রে পরশুরামের সঙ্গে আমার যুদ্ধ হ’ল। তিনি আমার সারথিকে বধ করলেন, আমাকেও শরাঘাতে ভূপাতিত করলেন। তখন আমি দেখলাম, সূর্য ও অগ্নির ন্যায় তেজস্বী আট জন ব্রাহ্মণ আমাকে বাহুদ্বারা বেষ্টন ক’রে আছেন, আমার জননী গঙ্গা রথে রয়েছেন। আমি তাঁর চরণ ধরে এবং পিতৃগণকে নমস্কার ক’রে আমার রথে উঠলাম। গঙ্গা অন্তর্হিত হলেন। আমি এক হৃদয়বিদারক বাণ নিক্ষেপ করলাম, পরশুরাম মূর্ছিত হয়ে জানুতে ভর দিয়ে প’ড়ে গেলেন। কিছু ক্ষণ পরে তিনি প্রকৃতিস্থ হয়ে আমাকে মারবার জন্য তাঁর চতুর্হস্ত ধনুতে শরযোজন করলেন, কিন্তু মহর্ষিগণ তাঁকে নিবারণ করলেন।

 রাত্রিকালে আমি স্বপ্ন দেখলাম, পূর্বদষ্ট আট জন ব্রাহ্মণ আমাকে বলছেন, গঙ্গানন্দন, পরশুরাম তোমাকে জয় করতে পারবেন না, তুমিই জয়ী হবে। তুমি প্রস্বাপন অস্ত্র প্রয়োগ কর, তাতে পরশুরাম নিহত হবেন না, কিন্তু নিদ্রায় অভিভূত হয়ে পরাস্ত হবেন। পরদিন কিছু কাল প্রচণ্ড যুদ্ধের পর আমি প্রস্বাপন অস্ত্র নিক্ষেপের উদ্‌যোগ করলাম। তখন আকাশ থেকে নারদ আমাকে বললেন, তুমি এই অস্ত্র প্রয়োগ ক’রো না, দেবগণ বারণ করছেন; পরশুরাম তপস্বী ব্রাহ্মণ এবং তোমার গুরু। এমন সময়ে পরশুরামের পিতৃগণ আবির্ভূত হয়ে তাঁকে বললেন, বৎস,