পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৬৮
মহাভারত

বাক্য মিথ্যা হবে না, শিখণ্ডী পুরুষ হবেই, অতএব কোনও কন্যার সঙ্গে এর বিবাহ দাও। দশার্ণরাজ হিরণ্যবর্মার কন্যার সঙ্গে শিখণ্ডীর বিবাহ হ’ল। কিছু কাল পরে এই কন্যা কয়েক জন দাসীকে তাঁর পিতার কাছে পাঠিয়ে জানালেন যে দ্রুপদকন্যা শিখণ্ডিনীর সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয়েছে। হিরণ্যকর্মা অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে দূত দ্বারা দ্রুপদকে ব’লে পাঠালেন, দুর্মতি, তুমি আমাকে প্রতারিত করেছ, আমি শীঘ্রই তোমাকে অমাত্যপরিজন সহ বিনষ্ট করব।

 দ্রুপদ ভীত হয়ে তাঁর মহিষীর সঙ্গে মন্ত্রণা করলেন। মহিষী বললেন, মহারাজ, আমার পুত্র হয় নি, সপত্নীদের ভয়ে আমি শিখণ্ডিনীকে পুরুষ ব’লে প্রচার করেছি, মহাদেবও বলেছিলেন যে আমাদের সন্তান প্রথমে স্ত্রী তার পর পুরুষ হবে। তুমি এখন মন্ত্রীদের পরামর্শ নিয়ে রাজধানী সুরক্ষিত কর এবং প্রচুর দক্ষিণা দিয়ে দেবপূজা ও হোম কর। পিতামাতার এই কথা শুনে শিখণ্ডিনী ভাবলেন, আমার জন্য এঁরা দুঃখ পাচ্ছেন, আমার মরাই ভাল।

 শিখণ্ডিনী গৃহ ত্যাগ ক’রে গহন বনে এলেন। সেই বনে স্থূণাকর্ণ নামে এক যক্ষের ভবন ছিল। শিখণ্ডিনী তাতে প্রবেশ ক’রে বহু দিন অনাহারে থেকে শরীর শুষ্ক করলেন। একদিন যক্ষ দয়ার্দ্র হয়ে দর্শন দিয়ে শিখণ্ডিনীকে বললেন, তোমার অভীষ্ট কি তা বল, আমি পূর্ণ করব। আমি কুবেরের অনুচর, অদেয় বস্তুও দিতে পারি। শিখণ্ডিনী তাঁর ইতিহাস জানিয়ে বললেন, যক্ষ, আমাকে পুরুষ করে দিন। যক্ষ বললেন, রাজকন্যা, আমার পুরুষত্ব কিছুকালের জন্য তোমাকে দেব, তাতে তুমি তোমার পিতার রাজধানী ও বন্ধুগণকে রক্ষা করতে পারবে। কিন্তু তুমি আবার এসে আমার পুরুষত্ব ফিরিয়ে দিও। দ্রুপদকন্যা সম্মত হয়ে যক্ষের সঙ্গে লিঙ্গবিনিময় করলেন। স্থূণাকর্ণ স্ত্রীরূপ পেলেন, শিখণ্ডী পুরুষ হয়ে পিতার কাছে গেলেন।

 দ্রুপদ আনন্দিত হয়ে দশার্ণরাজকে ব’লে পাঠালেন, বিশ্বাস করুন, আমার পুত্র পরুষই। আপনি পরীক্ষা করুন, লোকে আপনাকে মিথ্যা কথা বলেছে। রাজা হিরণ্যবর্মা কয়েকজন চতুরা সুন্দরী যুবতীকে পাঠালেন। তারা শিখণ্ডীকে পরীক্ষা ক’রে সন্তুষ্ট হয়ে ফিরে গেল। তাদের কাছে সংবাদ পেয়ে দশার্ণরাজ আনন্দিত হয়ে বৈবাহিক দ্রুপদের ভবনে এলেন এবং কয়েকদিন থেকে কন্যাকে ভর্ৎসনা ক’রে চ’লে গেলেন।

 কিছু কাল পরে কুবের স্থূণাকর্ণের ভবনে এলেন। তিনি তাঁর অনুচরগণকে বললেন, এই ভবন উত্তমরূপে সজ্জিত দেখছি, কিন্তু মন্দবুদ্ধি স্থূণাকর্ণ