আমার কাছে আসছে না কেন? যক্ষরা বললে, মহারাজ, দ্রুপদের শিখণ্ডিনী নামে একটি কন্যা আছেন, কোনও কারণে স্থূণাকর্ণ তাঁকে নিজের পুরষলক্ষণ দিয়ে তাঁর স্ত্রীলক্ষণ নিয়েছেন। তিনি এখন স্ত্রী হয়ে গৃহমধ্যে রয়েছেন, লজ্জায় আপনার কাছে আসতে পারছেন না। কুবেরের আজ্ঞায় তাঁর অনুচরগণ স্থূণাকর্ণকে নিয়ে এল। কুবের ক্রুদ্ধ হয়ে শাপ দিলেন, পাপবুদ্ধি, তুমি যক্ষগণের অপমান করেছ, অতএব স্ত্রী হয়েই থাক, আর দ্রুপদকন্যা পুরুষ হয়ে থাকুক। শিখণ্ডীর মৃত্যুর পর তুমি পূর্বরূপে ফিরে পাবে। এই বলে কুবের সদলে চ’লে গেলেন।
পূর্বের প্রতিজ্ঞা অনুসারে শিখণ্ডী এসে স্থূণাকর্ণকে বললেন, আমি ফিরে এসেছি। স্থূণাকর্ণ বহু বার বললেন, আমি প্রীত হয়েছি। তার পর তিনি কুবেরের শাপের কথা জানিয়ে বললেন, রাজপুত্র, এখন তুমি যেখানে ইচ্ছা বিচরণ কর, দৈবকে অতিক্রম করা আমাদের সাধ্য নয়। শিখণ্ডী আনন্দিত হয়ে রাজভবনে ফিরে গেলেন। দ্রুপদ রাজা তাঁকে দ্রোণাচার্যের কাছে অস্ত্রশিক্ষার জন্য পাঠালেন। কালক্রমে ধৃষ্টদ্যুম্নের সঙ্গে শিখণ্ডীও চতুষ্পাদ ধনুর্বেদ শিক্ষা করলেন।
অবার ইতিহাস শেষ ক’রে ভীষ্ম বললেন, দুর্যোধন, আমি গুপ্তচরদের জড় অন্ধ ও বধির সাজিয়ে দ্রুপদের কাছে পাঠাতাম, তারাই আমাকে সকল বৃত্তান্ত জানিয়েছিল। শিখণ্ডী স্ত্রী ছিল, পরে পুরুষত্ব পেয়ে রথিশ্রেষ্ঠ হয়েছে, কাশীরাজের জ্যেষ্ঠা কন্যা অম্বাই শিখণ্ডী। আমার এই প্রতিজ্ঞা সকলেই জানে যে স্ত্রীলোককে, স্ত্রী থেকে পুরুষ হয়েছে এমন লোককে, এবং স্ত্রীনামধারী ও স্ত্রীরূপধারী পুরুষকে আমি শরাঘাত করি না।
২৮। যুদ্ধযাত্রা
পরদিন প্রভাতকালে দুর্যোধন ভীষ্ম প্রভৃতিকে জিজ্ঞাসা করলেন, ভীমার্জুন-ধৃষ্টদ্যুম্নাদি কর্তৃক রক্ষিত এই বিশাল পাণ্ডবাহিনী আপনারা কত কালে বিনষ্ট করতে পারেন?
ভীষ্ম বললেন, আমি প্রতিদিন দশ সহস্র সৈন্য এবং এক সহস্র রথীকে বধ করব, তাতে এক মাসে সমস্ত বিনষ্ট হবে। দ্রোণ বললেন, আমি স্থবির হয়েছি, শক্তি কমে গেছে, তথাপি আমিও ভীষ্মের ন্যায় এক মাসে পাণ্ডববাহিনী ধ্বংস করতে পারি। কৃপ বললেন, আমি দুই মাসে পারি। অশ্বত্থামা বললেন, আমি দশ দিনে পারি। কর্ণ বললেন, আমি পাঁচ দিনে পারি।