পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভীষ্মপর্ব
৩৭৩

 ধৃতরাষ্ট্র বললেন, পিতা, মানুষ স্বার্থের জন্য মোহগ্রস্ত হয়, আমিও মানুষ মাত্র। আমার অধর্মে মতি নেই, কিন্তু পুত্রগণ আমার বশবর্তী নয়। আপনি আমার উপর প্রসন্ন হ’ন। ব্যাস বললেন, রাজা, সাম ও দান নীতিতে যে জয়লাভ হয় তাই শ্রেষ্ঠ, ভেদের দ্বারা যা হয় তা মধ্যম, এবং যুদ্ধ দ্বারা যা হয় তা অধম। সেনার বাহুল্য থাকলেই জয়লাভ হয় না, জয় অনিশ্চিত এবং দৈবের বশেই ঘটে। যাঁরা পূর্বে বিজয়ী হন তাঁরাই আবার পরে পরাজিত হন।

৩। সঞ্জয়ের জীববৃত্তান্ত ও ভূবৃত্তান্ত কথন

 ব্যাসদেব চ’লে গেলে ধৃতরাষ্ট্র সঞ্জয়কে বললেন, রাজারা ভূমি অধিকারের জন্যই যুদ্ধ করেন, অতএব ভূমির বহু গুণ আছে। আমি তা শুনতে ইচ্ছা করি।

 সঞ্জয় বললেন, মহারাজ, আমার যা জানা আছে তা বলছি। জগতে দুই প্রকার ভূত (জীব) আছে, জঙ্গম ও স্থাবর। জঙ্গম ভূত ত্রিবিধ—অণ্ডজ স্বেদজ ও জরায়ুজ; এদের মধ্যে জরায়ুজই শ্রেষ্ঠ, আবার জরায়ুজের মধ্যে মানুষ ও পশু শ্রেষ্ঠ। সিংহ ব্যাঘ্র বরাহ মহিষ হস্তী ভল্লুক ও বানর—এই সপ্ত প্রকার বন্য জরায়ুজ। গো ছাগ মেষ মনুষ্য অশ্ব অশ্বতর ও গদর্ভ—এই সপ্ত প্রকার গ্রাম্য জরায়ুজ। গ্রাম্য জীবদের মধ্যে মানুষ এবং বন্য জীবদের মধ্যে সিংহ শ্রেষ্ঠ। সমস্ত জীবই পরস্পরের উপর নির্ভর করে। উদ্‌ভিজ্জ সকল স্থাবর, তাদের পঞ্চ জাতি—বৃক্ষ গুল্ম লতা বল্লী ও ত্বক্‌সার তৃণ। চতুর্দশ জঙ্গম ভূত, পঞ্চ স্থাবর ভূত, এবং পঞ্চ মহাভূত — এই চতুর্বিংশতি পদার্থ গায়ত্রীর তুল্য। যিনি এই গায়ত্রী যথার্থরূপে জানেন তিনি বিনষ্ট হন না। সমস্তই ভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে ভূমিতেই বিনাশ পায়, ভূমিই সর্ব ভূতের পরম আশ্রয়। যার ভূমি আছে সে স্থাবরজঙ্গমের অধিকারী, এই কারণেই রাজারা ভূমির লোভে পরস্পরকে হত্যা করেন।

 তার পর সঞ্জয় ভূমি জল বায়ু অগ্নি ও আকাশ এই পঞ্চ মহাভূত এবং তাদের গুণাবলী বিবৃত ক’রে সুদর্শন দ্বীপ বা জম্বু দ্বীপের কথা বললেন। জম্বু দ্বীপে ছয় বর্ষপর্বত আছে, যথা—হিমালয় হেমকূট নিষধ নীল শ্বেত ও শৃঙ্গবান। এই সকল বর্ষপর্বত পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত এবং উভয় প্রান্তে সমুদ্রে অবগাহন ক’রে আছে। এদের মধ্যে মধ্যে বহু সহস্র যোজন বিস্তৃত পুণ্য জনপদসমূহ আছে, তাদের নাম বর্ষ। হিমালয়ের দক্ষিণে ভারতবর্ষ, উত্তরে কিম্পুরুষগণের বাসভূমি হৈমবতবর্ষ। হেমকূটের উত্তরে হরিবর্ষ। নিষধ পর্বতের উত্তরে এবং নীল পর্বতের দক্ষিণে