পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৭৪
মহাভারত

মাল্যবান পর্বত। মাল্যবানের পর গন্ধমাদন, এবং এই দুই গিরির মধ্যে কনকময় মেরু পর্বত। মেরু পর্বতের চার পার্শ্বে চার দ্বীপ (মহাদেশ) আছে—ভদ্রাশ্ব কেতুমাল জম্বুদ্বীপ ও উত্তরকুরু। নীল পর্বতের উত্তরে শ্বেতবর্ষ, তার পর হৈরণ্যকবর্ষ, এবং তার পর ঐরাবতবর্ষ। দক্ষিণে ভারতবর্ষ এবং উত্তরে ঐরাবতবর্ষ—এই দুইএর মধ্যে ইলাবৃত সমেত পাঁচটি[১] বর্ষ।

 অন্যান্য বর্ষের বর্ণনা ক’রে সঞ্জয় বললেন, মহারাজ, ভারতবর্ষে সাতটি কুলপর্বত আছে, যথা—মহেন্দ্র মলয় সহ্য শক্তিমান ঋক্ষবান বিধ্য ও পারিপাত্র। গঙ্গা সিন্ধু সরস্বতী গোদাবরী নর্মদা শতদ্রু বিপাশা চন্দ্রভাগা ইরাবতী বিতস্তা যমুনা প্রভৃতি অনেক নদী আছে, এই সকল নদী মাতৃতুল্য ও মহাফলপ্রদ। ভারতে বহু দেশ আছে, যথা—কুরুপাঞ্চাল শাল্ব শূরসেন মৎস্য চেদি দশার্ণ পাঞ্চাল কোশল মদ্র কলিঙ্গ কাশী বিদেহ কাশ্মীর সিন্ধু সৌবীর গান্ধার প্রভৃতি, দক্ষিণে দ্রবিড় কেরল কর্ণাটক প্রভৃতি এবং উত্তরে যবন চীন কাম্বোজ হূণ পারসীক প্রভৃতি ম্লেচ্ছ জাতির দেশসমূহ। কুকুর যেমন মাংসখণ্ড নিয়ে কাড়াকাড়ি করে, রাজারাও তেমনি পরস্পরের ভূমি হরণ করেন, কিন্তু এ পর্যন্ত কারও কামনার তৃপ্তি হয় নি।

 তার পর সঞ্জয় চতুর্যুগ, শাক কুশ শাল্মলি ও ক্রৌঞ্চ দ্বীপের বৃত্তান্ত, এবং রাহু ও চন্দ্রসূর্যের পরিমাণ বিবৃত ক’রে বললেন, মহারাজ, আমরা যেখানে আছি এই দেশই ভারতবর্ষ, এখান থেকেই সর্বপ্রকার পুণ্যকর্ম প্রবর্তিত হয়েছে।


॥ ভগবদ্‌গীতাপর্বাধ্যায়॥

৪। কুরুপাণ্ডবের ব্যূহরচনা

 পরদিন সূর্যোদয় হ’লে কৌরব ও পাণ্ডব সৈন্যগণ সজ্জিত হয়ে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হ’ল। বিশাল কৌরববাহিনীর অগ্রভাগে ভীষ্ম শ্বেত উষ্ণীষ ও বর্ম ধারণ ক’রে শ্বেতাশ্বযুক্ত রজতময় রথে উঠলেন, বোধ হ’ল যেন চন্দ্র উদিত হয়েছেন। কুরুপিতামহ ভীষ্ম এবং দ্রোণাচার্য প্রতিদিন প্রাতঃকালে উঠে বলতেন—পাণ্ডুপত্রদের জয় হ’ক; কিন্তু তাঁরা ধৃতরাষ্ট্রের আনুগত্য স্বীকার করেছিলেন এই কারণেই কৌরবপক্ষে যুদ্ধ করতে এলেন।


  1. হৈমবত হরি ইলাবৃত শ্বেত ও হৈরণ্যক।