পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভীষ্মপর্ব
৩৮৩

 যুধিষ্ঠিরকে আসতে দেখে দুর্যোধনের সৈন্যরা বলাবলি করতে লাগল, এই কুলাঙ্গার ভয় পেয়ে ভ্রাতাদের সঙ্গে ভীষ্মের শরণ নিতে আসছে; ভীমার্জুনাদি থাকতে যুধিষ্ঠির যুদ্ধে ভীত হ’ল কেন? প্রখ্যাত ক্ষত্রিয় বংশে নিশ্চয় এঁর জন্ম হয় নি। সৈন্যরা এই ব’লে আনন্দিতমনে তাদের উত্তরীয় নাড়তে লাগল।

 ভীষ্মের কাছে এসে দুই হাতে তাঁর পা ধ’রে যুধিষ্ঠির বললেন, দুর্ধর্ষ পিতামহ, আপনাকে আমন্ত্রণ করছি, আপনার সঙ্গে আমরা যুদ্ধ করব, আপনি অনুমতি দিন, আশীর্বাদ করুন। ভীষ্ম বললেন, মহারাজ, যদি এই ভাবে আমার কাছে না আসতে তবে তোমাকে আমি পরাজয়ের জন্য অভিশাপ দিতাম। পাণ্ডুপুত্র, আমি প্রীত হয়েছি, তুমি যুদ্ধ কর, জয়ী হও, তোমার আর যা অভীষ্ট তাও লাভ কর। মানষ অর্থের দাস, কিন্তু অর্থ কারও দাস নয়, এ সত্য। কৌরবগণ অর্থ দিয়ে আমাকে বেঁধে রেখেছে, তাই ক্লীবের ন্যায় তোমাকে বলছি—আমি পাণ্ডবপক্ষে যোগ দিয়ে যুদ্ধ করতে পারি না; এ ভিন্ন আমার কাছে তুমি আর কি চাও বল। যুধিষ্ঠির বললেন, মহাপ্রাজ্ঞ, আমার হিতের জন্য আপনি মন্ত্রণা দিন এবং কৌরবদের জন্য যুদ্ধ করুন, এই আমার প্রার্থনা। ভীষ্ম বললেন, আমি তোমার শত্রুদের পক্ষে যুদ্ধে করব, তুমি আমার কাছে কি সাহায্য চাও? যুধিষ্ঠির বললেন, পিতামহ, আপনি অপরাজেয়, যদি আমাদের শুভকামনা করেন তবে বলুন আপনাকে কোন্ উপায়ে জয় করব? ভীষ্ম বললেন, কৌন্তেয়, আমাকে যুদ্ধে জয় করতে পারে এমন পুরুষ দেখি না, এখন আমার মৃত্যুকালও উপস্থিত হয় নি; তুমি আবার আমার কাছে এসো।

 ভীষ্মের কাছে বিদায় নিয়ে যুধিষ্ঠির দ্রোণাচার্যের কাছে গেলেন এবং প্রণাম ও প্রদক্ষিণ ক’রে বললেন, ভগবান, আপনাকে আমন্ত্রণ করছি, আমি নিষ্পাপ হয়ে যুদ্ধ করব, কোন, উপায়ে সকল শত্রু জয় করতে পারব তা বলুন। ভীষ্মের ন্যায় দ্রোণাচার্যও বললেন, যুদ্ধের পূর্বে যদি আমার কাছে না আসতে তবে আমি অভিশাপ দিতাম। মানুষ অর্থের দাস, অর্থ কারও দাস নয়। কৌরবগণ অর্থ দিয়ে আমাকে বেঁধে রেখেছে, সেজন্য ক্লীবের ন্যায় তোমাকে বলছি—আমি কৌরবদের জন্যই যুদ্ধ করব, কিন্তু তোমার বিজয়কামনায় আশীর্বাদ করছি। যেখানে ধর্ম সেখানেই কৃষ্ণ, যেখানে কৃষ্ণ সেখানেই জয়। তুমি যাও, যুদ্ধ কর। আর যদি কিছু জিজ্ঞাস্য থাকে তো বল। যুধিষ্ঠির বললেন, দ্বিজশ্রেষ্ঠ, আপনি অপরাজেয়, যুদ্ধে কি ক’রে আপনাকে জয় করব? দ্রোণ বললেন, বৎস, আমি যখন রথারূঢ় হয়ে শরবর্ষণ করি তখন আমাকে বধ করতে পারে এমন লোক দেখি না। আমি যদি অস্ত্র ত্যাগ ক’রে