পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৮৬
মহাভারত

ভীষ্ম অভিমন্যুকে শরজালে আবৃত করলেন, বিরাট ভীমসেন সাত্যকি প্রভৃতি অভিমন্যুকে রক্ষা করতে এলেন। বিরাটপুত্র উত্তর একটি বৃহৎ হস্তীতে চ’ড়ে শল্যকে আক্রমণ করলেন, সেই হস্তীর পদাঘাতে শল্যের রথের চার অশ্ব বিনষ্ট হ’ল। শল্য ভুজঙ্গসদৃশ শক্তি-অস্ত্র নিক্ষেপ করলেন, তার আঘাতে উত্তর প্রাণশূন্য হয়ে প’ড়ে গেলেন। উত্তরকে নিহত দেখে বিরাটের অপর পুত্র ও সেনাপতি শ্বেত শল্যকে আক্রমণ করলেন। শল্য কৃতবর্মার রথে উঠলেন, শল্যপুত্র রুক্মরথ এবং বৃহদ্‌বল প্রভৃতি অপর ছ জন বীর শল্যকে বেষ্টন ক’রে রইলেন। শ্বেতের শরাঘাতে শত শত যোদ্ধা নিহত হচ্ছে দেখে ভীষ্ম সত্বর এলেন এবং ভল্লের আঘাতে শ্বেতের অশ্ব ও সারথি বধ করলেন। রথ থেকে লাফিয়ে নেমে শ্বেত ভীষ্মের প্রতি শক্তিঅস্ত্র নিক্ষেপ করলেন। ভীষ্মের শরাঘাতে শক্তি ছিন্ন হ’লে শ্বেত গদার প্রহারে ভীষ্মের রথ অশ্ব ও সারথি বিনষ্ট করলেন। তখন ভীষ্ম এক মন্ত্রসিদ্ধ বাণ মোচন করলেন, জ্বলন্ত অশনির ন্যায় সেই বাণ শ্বেতের বর্ম ও হৃদয় ভেদ ক’রে ভূমিতে প্রবিষ্ট হ’ল। নরশার্দূল শ্বেতের মৃত্যুতে পাণ্ডবপক্ষীয় ক্ষত্রিয়গণ শোকমগ্ন হলেন, ঘোর বাদ্যধ্বনির সহিত দুঃশাসন নেচে বেড়াতে লাগলেন।

 তার পর সূর্যাস্ত হ’ল। পাণ্ডবগণ সৈন্যদের নিবৃত্ত করলেন, দুই পক্ষের অবহার (যুদ্ধবিরাম) ঘোষিত হ’ল।

৮। ভীমার্জুনের কৌরবসেনা দলন

(দ্বিতীয় দিনের যুদ্ধ)

 প্রথম দিনের যুদ্ধের পর যুধিষ্ঠির শোকার্ত হয়ে কৃষ্ণকে বললেন, গ্রীষ্ম কালে অগ্নি যেমন তৃণরাশি দগ্ধ করে সেইরূপ ভীষ্ম আমাদের সৈন্য ধ্বংস করছেন। যম ইন্দ্র বরুণ ও কুবেরকেও জয় করা যায়, কিন্তু ভীষ্মকে জয় করা অসম্ভব। কেশব, আমি বুদ্ধির দোষে ভীষ্মরূপ অগাধ জলে মগ্ন হয়েছি। আমি বরং বনে যাব, সাক্ষাৎ মৃত্যুবরূপ ভীষ্মের কবলে আমার মিত্র এই নরপতিগণকে ফেলতে চাই না। মাধব, কিসে আমার মঙ্গল হবে বল। আমি দেখছি সব্যসাচী অর্জুন যুদ্ধে উদাসীন হয়ে আছেন, একমাত্র ভীমই ক্ষত্রধর্ম স্মরণ ক’রে যথাশক্তি যুদ্ধে গদাঘাতে শত্রুর সৈন্য রথ অশ্ব ও হস্তী বিনষ্ট করছেন। কিন্তু এই সরল যুদ্ধে শত শত বৎসরেও ভীম শত্রুসেনা ক্ষয় করতে পারবেন না।