পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভীষ্মপর্ব
৩৮৯

সঙ্গে আপনি যুদ্ধ করবেন না। আপনার দ্রোণের ও কৃপের মনোভাব পূর্বে জানতে পারলে আমি কর্ণের সঙ্গেই কর্তব্য স্থির করতাম। যদি আপনারা আমাকে ত্যাগ না ক’রে থাকেন তবে এখন যথাশক্তি যুদ্ধ করুন।

 ক্রোধে চক্ষু বিস্ফাতি ক’রে ভীষ্ম সহাস্যে বললেন, রাজা, তোমাকে আমি বহু বার বলেছি যে পাণ্ডবগণ ইন্দ্রাদি দেবতারও অজেয়। আমি বৃদ্ধ, তথাপি যথাশক্তি যুদ্ধ করব, আজ আমি একাকীই পাণ্ডবগণকে তাদের সৈন্য ও বন্ধু সমেত প্রত্যাহত করব। ভীষ্মের এই প্রতিজ্ঞা শুনে দুর্যোধন ও তাঁর ভ্রাতারা আনন্দিত হয়ে শঙ্খ ও ভেরী বাজালেন।

 সেই দিনে পূর্বাহ্ন অতীত হ’লে ভীষ্ম বৃহৎ সৈন্যদল নিয়ে এবং দুর্যোধনাদি কর্তৃক রক্ষিত হয়ে পাণ্ডবসৈন্যের প্রতি ধাবিত হলেন। তাঁর শরবর্ষণে পীড়িত হয়ে পাণ্ডবগণের মহাসেনা প্রকম্পিত হ’ল, মহারথগণ পালাতে লাগলেন, অর্জুন প্রভৃতি চেষ্টা ক’রেও তাঁদের নিবারণ করতে পারলেন না। পাণ্ডবসেন। ভগ্ন হ’ল, পালাবার সময়েও দুজন একত্র রইল না, সকলে বিমূঢ় হয়ে হাহাকার করতে লাগল।

 কৃষ্ণ অর্জুনকে বললেন, পার্থ, তোমার আকাঙ্ক্ষিত কাল উপস্থিত হয়েছে, যদি মোহগ্রস্ত না হও তবে ভীষ্মকে প্রহার কর। অর্জুনের অনুরোধে কৃষ্ণ ভীষ্মের কাছে রথ নিয়ে গেলেন। তখন ভীষ্ম ও অর্জুনের ঘোর যুদ্ধ হ’তে লাগল। অর্জুনের হস্তলাঘব দেখে ভীষ্ম বললেন, সাধু পার্থ, সাধু পাণ্ডুপুত্র! বৎস, আমি অতিশয় প্রীত হয়েছি, আমার সঙ্গে যুদ্ধ কর। এই সময়ে কৃষ্ণ অশ্বচালনায় পরম কৌশল দেখালেন, তিনি ভীষ্মের বাণ ব্যর্থ ক’রে দ্রুতবেগে মণ্ডলাকারে রথ চালাতে লাগলেন।

 ভীষ্মের পরাক্রম এবং অর্জুনের মৃদু যুদ্ধ দেখে ভগবান কেশব এই চিন্তা করলেন—যুধিষ্ঠির বলহীন হয়েছেন, তাঁর মহাসৈন্য ভগ্ন হয়ে পালাচ্ছে এবং কৌরবগণ হৃষ্ট হয়ে দ্রুতবেগে আসছে। তীক্ষ্ণ শরে আহত হয়েও অর্জুন নিজের কর্তব্য বুঝছেন না, ভীষ্মের গৌরব তাঁকে অভিভূত করেছে। আজ আমিই ভীষ্মকে বধ ক’রে পাণ্ডবদের ভার হরণ করব।

 সাত্যকি দেখলেন, কৌরবগণের শত সহস্র অশ্বারোহী গজারোহী রথী ও পদাতি অর্জুনকে বেষ্টন করছে এবং ভীষ্মের শরবর্ষণে পীড়িত হয়ে বহু পাণ্ডবসৈন্য পালিয়ে যাচ্ছে। সাত্যকি বললেন, ক্ষত্রিয়গণ, কোথায় যাচ্ছ? পলায়ন সজ্জনের ধর্ম নয়, প্রতিজ্ঞাভঙ্গ ক'রো না, বীরধর্ম পালন কর। কৃষ্ণ বললেন,