পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৯০
মহাভারত

সাত্যকি, যারা যাচ্ছে তারা যাক, যারা আছে তারাও যাক। দেখ, আজ আমিই অনুচর সহ ভীষ্ম-দ্রোণকে নিপাতিত করব। এই পার্থসারথির কাছে কোনও কৌরব নিস্তার পাবে না, আজ আমি ভীষ্ম-দ্রোণাদি এবং ধার্তরাষ্ট্রগণকে বধ ক’রে অজাতশত্রু যুধিষ্ঠিরকে রাজপদে বসাব।

 স্মরণমাত্র কৃষ্ণের হস্তাগ্রে সুদর্শন চক্র আরূঢ় হ’ল। তিনি রথ থেকে লাফিয়ে নেমে সেই ক্ষুরধার সূর্যপ্রভ সহস্রবজ্রতুল্য চক্র ঘূর্ণিত করলেন, এবং সিংহ যেমন মদমত্ত হস্তীকে বধ করতে যায় সেইরূপ ভীষ্মের দিকে ধাবিত হলেন। কৃষ্ণের অঙ্গে লম্বমান পীতবর্ণ উত্তরীয়, তিনি বিদ্যদ্‌বেষ্টিত মেঘের ন্যায় সগর্জনে সক্রোধে চক্রহস্তে আসছেন, এই দেখে কৌরবগণের বিনাশের ভয়ে সকলে আর্তনাদ ক’রে উঠল। ভীষ্ম তাঁর ধনুর জ্যাকর্ষণে ক্ষান্ত হলেন এবং ধীরভাবে কৃষ্ণকে বললেন, দেবেশ জগন্নিবাস চক্রপাণি মাধব, এস এস, তোমাকে নমস্কার করি। সর্বশরণ্য লোকনাথ, আমাকে রথ থেকে নিপাতিত কর। কৃষ্ণ, তোমার হস্তে নিহত হ’লে আমি ইহলোকে ও পরলোকে শ্রেয়োলাভ করব। তুমি আমার প্রতি ধাবিত হয়েছ তাতেই আমি সর্বলোকের নিকট সম্মানিত হয়েছি।

 অর্জুন রথ থেকে লাফিয়ে নেমে কৃষ্ণের দুই বাহু ধরলেন এবং প্রবল বায়ুতে বৃক্ষ যেমন চালিত হয় সেইরূপ কৃষ্ণ কর্তৃক কিছুদূর বেগে চালিত হলেন, তার পর কৃষ্ণের দুই চরণ ধ’রে তাঁকে সবলে নিবৃত্ত করলেন। অর্জুন প্রণাম ক’রে বললেন, কেশব, তুমিই পাণ্ডবদের গতি, ক্রোধ সংবরণ কর। আমি পুত্র ও ভ্রাতাদের নামে শপথ করছি, আমার প্রতিজ্ঞা লঙ্ঘন করব না, তোমার নিয়োগ অনুসারে কৌরবগণকে বধ করব। কৃষ্ণ প্রসন্ন হয়ে আবার রথে উঠলেন এবং পাঞ্চজন্য শঙ্খ বাজিয়ে সর্ব দিক ও আকাশ নিনাদিত করলেন।

 তার পর অর্জুন অতি ভয়ংকর মাহেন্দ্র অস্ত্র প্রয়োগ করলেন। কৌরবপক্ষের বহু পদাতি অশ্ব রথ ও গজ বিনষ্ট হ’ল, রণভূমিতে রক্তের নদী বইতে লাগল। সূর্যাস্ত হ’লে ভীষ্ম দ্রোণ দুর্যোধন প্রভৃতি যুদ্ধ থেকে নিবৃত্ত হলেন। কৌরব সৈন্যগণ বলতে লাগল, আজ অর্জুন দশ হাজার রথী, সাত শ হস্তী এবং সমস্ত প্রাচ্য সৌবীর ক্ষুদ্রক ও মালব সৈন্য নিপাতিত করেছেন, তিনি একাকীই ভীষ্ম দ্রোণ কৃপ ভূরিশ্রবা শল্য প্রভৃতি বীরগণকে জয় করেছেন। এই ব’লে তারা বহু সহস্র মশাল জ্বেলে ত্রস্ত হয়ে শিবিরে চ’লে গেল।