পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৯২
মহাভারত

১১। সাত্যকিপুত্রগণের মৃত্যু

(পঞ্চম দিনের যুদ্ধ)

 রাত্রিকালে দুর্যোধন ভীষ্মকে বললেন, পিতামহ, আপনি এবং দ্রোণ শল্য কৃপ অশ্বত্থামা ভূরিশ্রবা ভগদত্ত প্রভৃতি সকলেই মহারথ, আপনারা এই যুদ্ধে দেহত্যাগে প্রস্তুত এবং ত্রিলোকজয়েও সমর্থ। তথাপি পাণ্ডবরা আমাদের জয় করছে কেন?

 ভীষ্ম বললেন, রাজা, এ বিষয়ে তোমাকে আমি বহুবার বলেছি, কিন্তু তুমি আমার কথা শোন নি। তুমি পাণ্ডবদের সঙ্গে সন্ধি কর, তাতে তোমার ও জগতের মঙ্গল হবে। তুমি পাণ্ডবদের অবজ্ঞা করতে, তার ফল এখন পাচ্ছ। শার্ঙ্গধর কৃষ্ণ যাঁদের রক্ষা করেন সেই পাণ্ডবদের জয় করতে পারে এমন কেউ অতীত কালে ছিল না, বর্তমানে নেই, ভবিষ্যতেও হবে না। আমি এবং বেদজ্ঞ মুনিরা পূর্বেই তোমাকে বারণ করেছিলাম যে বাসুদেবের সঙ্গে বিরোধ ক’রো না, পাণ্ডবদের সঙ্গে যুদ্ধ ক’রো না, কিন্তু তুমি মোহবশে এ কথা গ্রাহ্য কর নি। আমার মনে হয় তুমি মোহগ্রস্ত রাক্ষস। গাণ্ডবগণ কৃষ্ণের সাহায্য ও আত্মীয়তায় রক্ষিত, সেজন্য তারা জয়ী হবেই।

 পরদিন প্রভাতকালে ভীষ্ম মকর ব্যূহ এবং পাণ্ডবগণ শোন ব্যূহ রচনা করলেন। দুই পক্ষে প্রচণ্ড যুদ্ধ হ’তে লাগল। পূর্বদিনে কৌরবপক্ষের সৈন্যক্ষয় এবং ভ্রাতাদের মৃত্যু স্মরণ ক’রে দুর্যোধন বললেন, আচার্য, আপনি সর্বদা আমার হিতকামী, আপনার ও পিতামহ ভীষ্মের সাহায্যে আমরা দেবগণকেও জয় করতে পারি, হীনবল পাণ্ডবরা দূরের কথা। আপনি এমন চেষ্টা করুন যাতে পাণ্ডবরা মরে। দ্রোণ ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন, তুমি নির্বোধ তাই পাণ্ডবদের পরাক্রম জান না। তাদের জয় করা অসম্ভব, তথাপি আমি যথাশক্তি তোমার কর্ম করব।

 ভীষ্ম তুমল যুদ্ধ করতে লাগলেন। ভীষ্মের সহিত অর্জুন, দুর্যোধনের সহিত ভীম, শল্যের সহিত যুধিষ্ঠির, এবং দ্রোণ-অশ্বত্থামার সহিত সাত্যকি চেকিতান ও দ্রুপদ যুদ্ধে নিরত হলেন। আকাশ থেকে শিলাবৃষ্টি হ’লে যেমন শব্দ হয়, তীক্ষ বাণে ছিন্ন নরমুণ্ডের পতনে সেইরূপ শব্দ হতে লাগল। সাত্যকির মহাবল দশ পুত্র ভূরিশ্রবাকে বেষ্টন ক’রে বাণবর্ষণ করতে লাগলেন। ভূরিশ্রবা ভল্লের আঘাতে দশ জনেরই শিরশ্ছেদন করলেন।