পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভীষ্মপৰ্ব
৩৯৩

 পুত্রদের নিহত দেখে সাত্যকি ভূরিশ্রবাকে আক্রমণ করলেন। দুজনেরই রথ ও অশ্ব বিনষ্ট হ’ল, তাঁরা খড়্‌গ ও চর্ম (ঢাল) ধারণ ক’রে লম্ফ দিয়ে পরস্পরের সম্মুখীন হলেন। তখন ভীমসেন সাত্যকিকে এবং দুর্যোধন ভূরিশ্রবাকে নিজের রথে তুলে নিলেন। এই দিনে অর্জুনের শরাঘাতে কৌরবপক্ষের পঁচিশ হাজার মহারথ নিহত হলেন। তার পর সূর্যাস্ত হ’লে ভীষ্ম অবহার ঘোষণা করলেন।

১২। ভীমের জয়

(ষষ্ঠ দিনের যুদ্ধ)

 পরদিন ধৃষ্টদ্যুম্ন মকর ব্যূহ এবং ভীষ্ম ক্রৌঞ্চ ব্যূহ নির্মাণ করলেন। ভীষ্ম-দ্রোণের সঙ্গে ভীমার্জুনের ঘোর যুদ্ধ হ’তে লাগল, তাঁদের শরবর্ষণে পীড়িত হয়ে দুই পক্ষের অসংখ্য সেনা পালিয়ে গেল।


 যুদ্ধের বিবরণ শুনতে শুনতে ধৃতরাষ্ট্র বললেন, সঞ্জয়, আমার সৈন্যগণ বহু গুণসম্পন্ন, তারা অতিবৃদ্ধ বা বালক নয়, কৃশ বা স্থূল নয়, তারা ক্ষিপ্রকারী দীর্ঘাকার দৃঢ়দেহ ও নীরোগ। তারা সর্বপ্রকার অস্ত্রপ্রয়োগে শিক্ষিত এবং হস্তী অশ্ব ও রথ চালনায় নিপুণ। পরীক্ষা ক’রে উপযুক্ত বেতন দিয়ে তাদের নিযুক্ত করা হয়েছে, গোষ্ঠী (আড্‌ডা) থেকে তাদের আনা হয় নি, বন্ধুদের অনুরোধেও নেওয়া হয় নি। সেনাপতির কর্মে অভিজ্ঞ বিখ্যাত মহারথগণ তাদের নেতা, তথাপি যুদ্ধের বিপরীত ফল দেখা যাচ্ছে। হয়তো দেবতারাই পাণ্ডবপক্ষে যুদ্ধে নেমে আমার সৈন্য সংহার করছেন। বিদুর সর্বদাই হিতবাক্য বলেছেন, কিন্তু আমার মূর্খ পুত্র তা শোনে নি। বিধাতা যা নির্দিষ্ট করেছেন তার অন্যথা হবে না।

 সঞ্জয় বললেন, মহারাজ, আপনার দোষেই দ্যূতক্রীড়া হয়েছিল, তার ফল এই যুদ্ধ। আপনি এখন নিজ কর্মের ফল ভোগ করছেন। তার পর সঞ্জয় পুনর্বার যুদ্ধবিবরণ বলতে লাগলেন।


 ভীম রথ থেকে নেমে তাঁর সারথিকে অপেক্ষা করতে বললেন এবং কৌরবসেনার মধ্যে প্রবেশ ক’রে গদাঘাতে হস্তী অশ্ব রথী ও পদাতি বিনষ্ট করতে লাগলেন। ভীমের শূন্য রথ দেখে ধৃষ্টদ্যুম্ন উদ্‌বিগ্ন হয়ে ভীমের কাছে গেলেন