পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৯৬
মহাভারত

চেকিতান ও কৃপাচার্যের রথ নষ্ট হওয়ায় তাঁরা ভূমিতে যুদ্ধ করছিলেন। তাঁরা পরস্পরের খড়্‌গাঘাতে আহত হয়ে মূর্ছিত হলেন, শিশুপালপুত্র করকর্ষ ও শকুনি নিজ নিজ রথে তাঁদের তুলে নিলেন।

 ভীষ্ম শিখণ্ডীর ধনু ছেদন করলেন। যুধিষ্ঠির ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন, শিখণ্ডী, তুমি তোমার পিতার সম্মুখে প্রতিজ্ঞা করেছিলে যে ভীষ্মকে বধ করবে। তোমার প্রতিজ্ঞা যেন মিথ্যা না হয়, স্বধর্ম যশ ও কুলমর্যাদা রক্ষা কর। ভীষ্মের কাছে পরাস্ত হয়ে তুমি নিরুৎসাহ হয়েছ। ভ্রাতা ও বন্ধুদের ছেড়ে কোথায় যাচ্ছ? তোমার বীর খ্যাতি আছে, তবে ভীষ্মকে ভয় করছ কেন?

 যুধিষ্ঠিরের ভর্ৎসনায় লজ্জিত হয়ে শিখণ্ডী পুনর্বার ভীষ্মের প্রতি ধাবিত হলেন। শল্য আগ্নেয় অস্ত্র নিক্ষেপ করলেন, শিখণ্ডী তা বরণাস্ত্র দিয়ে প্রতিহত করলেন। তার পর শিখণ্ডী ভীষ্মের সম্মুখীন হলেন, কিন্তু তাঁর পূর্বের স্ত্রীত্ব স্মরণ ক’রে ভীষ্ম শিখণ্ডীকে অগ্রাহ্য করলেন।

 সূর্যাস্ত হ’লে পাণ্ডব ও কৌরবগণ রণস্থল ত্যাগ করে নিজ নিজ শিবিরে গিয়ে পরস্পরের প্রশংসা করতে লাগলেন। তার পর তাঁরা দেহ থেকে শল্য (বাণাগ্র প্রভৃতি) তুলে ফেলে নানাবিধ জলে স্নান ক’রে স্বস্ত্যয়ন করলেন। স্তুতিপাঠক বন্দী এবং গায়ক ও বাদকগণ তাঁদের মনোরঞ্জন করতে লাগল! সমস্ত শিবির যেন স্বর্গতুল্য হ’ল, কেউ যুদ্ধের আলোচনা করলেন না। তার পর তাঁরা শ্রান্ত হয়ে নিদ্রিত হলেন।

১৪। ইরাবানের মৃত্যু ― ঘটোৎকচের মায়া

(অষ্টম দিনের যুদ্ধ)

 পরদিন ভীষ্ম কূর্ম ব্যূহ এবং ধৃষ্টদ্যুম্ন শৃঙ্গাটক ব্যূহ রচনা করলেন। যোদ্ধারা পরস্পরের নাম ধরে আহ্বান ক’রে যুদ্ধে প্রবৃত্ত হলেন। ভীষ্ম পাণ্ডবসৈন্য মর্দন করতে লাগলেন। এই দিনের যুদ্ধে দুর্যোধনের ভাতা সুনাভ অপরাজিত কুণ্ডধার পণ্ডিত বিশালাক্ষ মহোদৱ আদিত্যকেতু ও বহ্বাশী ভীমের হস্তে নিহত হলেন। ভ্রাতৃশোকে কাতর হয়ে দুর্যোধন ভীষ্মের কাছে বিলাপ করতে লাগলেন। ভীষ্ম বললেন, বৎস, আমি দ্রোণ বিদুর ও গান্ধারী পূর্বেই তোমাকে সাবধান করেছিলাম, কিন্তু তুমি আমাদের কথা বোঝ নি। এ কথাও তোমাকে পূর্বে বলেছি যে আমি বা আচার্য দ্রোণ পাণ্ডবদের হাত থেকে কাকেও রক্ষা করতে পারব না। ভীম