পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৯৮
মহাভারত

সকলে দেখলে, দ্রোণ দুর্যোধন শল্য ও অশ্বত্থামা রক্তাক্ত হয়ে ছিন্নদেহে ছটফট করছেন, কৌরববীরগণ প্রায় সকলে নিপাতিত হয়েছেন, এবং বহু সহস্র অশ্ব ও আরোহী খণ্ড খণ্ড হয়ে গেছে। সৈন্যগণ শিবিরের দিকে ধাবিত হ’ল। তখন ভীষ্ম ও সঞ্জয় বললেন, তোমরা পালিও না, যুদ্ধ কর, যা দেখছ তা রাক্ষসী মায়া। সৈন্যরা বিশ্বাস করলে না, পালিয়ে গেল।

 দুর্যোধনের মুখে এই পরাজয়সংবাদ শুনে ভীষ্ম বললেন, বৎস, তুমি সর্বদা আত্মরক্ষায় সতর্ক থেকে যুধিষ্ঠির বা তাঁর কোনও ভ্রাতার সঙ্গে যুদ্ধ করবে, কারণ রাজধর্ম অনুসারে রাজার সঙ্গেই রাজা যুদ্ধ করেন। তার পর ভীষ্ম ভগদত্তকে বললেন, মহারাজ, আপনি শীঘ্র হিড়িম্বাপুত্র ঘটোৎকচের কাছে সসৈন্যে গিয়ে তাকে বধ করুন, আপনিই তার উপযুক্ত প্রতিযোদ্ধা।

 ঘটোৎকচের সঙ্গে ভীমসেন, অভিমন্যু, দ্রৌপদীর পঞ্চপুত্র, চেদিরাজ, দশার্ণরাজ প্রভৃতি ছিলেন। ভগদত্ত সুপ্রতীক নামক বৃহৎ হস্তীতে আরোহণ ক’রে এলেন এবং ভীষণ শক্তি অস্ত্র নিক্ষেপ করলেন। ঘটোৎকচ তা জানুতে রেখে ভেঙে ফেললেন। তখন ভগদত্ত সকলের উপর শরবর্ষণ করতে লাগলেন। এই সময়ে অর্জুন তাঁর পুত্র ইরাবানের মৃত্যুসংবাদ শুনে শোকাবিষ্ট ও ক্রুদ্ধ হয়ে ভীষ্ম কৃপ প্রভৃতিকে আক্রমণ করলেন। ভীমের শরাঘাতে দুর্যোধনেব সাত ভ্রাতা অনাধৃষ্টি কুণ্ডভেদী বিরাজ দীপ্তলোচন, দীর্ঘবাহু সুবাহু ও কনকধ্বজ বিনষ্ট হলেন, তাঁদের অন্য ভ্রাতারা ভয়ে পালিয়ে গেলেন।

 সন্ধ্যাকালে যুদ্ধের বিরাম হ’ল, কৌরব ও পাণ্ডবগণ নিজ নিজ শিবিরে চ’লে গেলেন।

১৫। ভীষ্মের পরাক্রম

(নবম দিনের যুদ্ধ)

 কর্ণ ও শকুনিকে দুর্যোধন বললেন, ভীষ্ম দ্রোণ কৃপ শল্য ও ভূরিশ্রবা পাণ্ডবগণকে কেন দমন করছেন না তার কারণ জানি না, তারা জীবিত থেকে আমার বল ক্ষয় করছে। দ্রোণের সমক্ষেই ভীম আমার ভ্রাতাদের বধ করেছে। কর্ণ বললেন, রাজা, শোক ক’রো না। ভীষ্ম যুদ্ধ থেকে সরে যান, তিনি দেহত্যাগ করলে তাঁর সমক্ষেই আমি পাণ্ডবদের সসৈন্যে বধ করব। ভীষ্ম সর্বদাই পাণ্ডবদের দয়া করেন,