পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪০০
মহাভারত

 পরদিন ভীষ্ম সর্বতোভদ্র নামে এক মহাব্যূহ রচনা করলেন। কৃপ কৃতবর্মা জয়দ্রথ দ্রোণ ভূরিশ্রবা শল্য ভগদত্ত দুর্যোধন প্রভৃতি এই ব্যূহের বিভিন্ন স্থানে রইলেন। পাণ্ডবগণও এক মহাব্যূহ রচনা করে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হলেন। অর্জুন ধৃষ্টদ্যুম্নকে বললেন, পাঞ্চালপুত্র, তুমি আজ শিখণ্ডীকে ভীষ্মের সম্মুখে রাখ, আমি তাঁর রক্ষক হব।

 যুদ্ধকালে নানাপ্রকার দুর্লক্ষণ দেখা গেল, ভূমিকম্প ও উল্কাপাত হ’ল, শৃগাল কুক্কুর প্রভৃতি ভয়ংকর শব্দ করতে লাগল। পিঙ্গলতুরঙ্গবাহিত রথে আরূঢ় হয়ে মহাবীর অভিমন্যু শরাঘাতে কৌরবসৈন্য মথিত করতে লাগলেন। দুর্যোধনের আদেশে রাক্ষস অলম্বুষ তাঁকে বাধা দিতে গেল। সে অরিঘাতিনী তামসী মায়া প্রয়োগ করলে, সর্ব স্থান অন্ধকারময় হ’ল, স্বপক্ষ বা পরপক্ষ কিছুই দেখা গেল না। তখন অভিমন্যু ভাস্কর অস্ত্রে সেই মায়া নষ্ট ক’রে অলম্বুষকে শরাঘাতে আচ্ছন্ন করলেন, অলম্বুষ রথ ফেলে ভয়ে পালিয়ে গেল।

 যুদ্ধকালে একবার পাণ্ডবপক্ষের অন্যবার কৌরবপক্ষের জয় হ’তে লাগল। অবশেষে ভীষ্মের প্রচণ্ড বাণবর্ষণে পাণ্ডবসেনা বিধ্বস্ত হ’ল, মহারথগণও বারণ না শুনে পালাতে লাগলেন। নিহত হস্তী ও অশ্বের মৃতদেহে এবং ভগ্ন রথ ও ধজে রণস্থল ব্যাপ্ত হ’ল, সৈন্যগণ বিমূঢ় হয়ে হাহাকার করতে লাগল।

 কৃষ্ণ অর্জুনকে বললেন, বীর, তুমি বিরাটনগরে সঞ্জয়কে বলেছিলে যে যুদ্ধক্ষেত্রে ভীষ্মদ্রোণপ্রমুখ সমস্ত কুরুসৈন্য সংহার করবে। ক্ষত্রধর্ম স্মরণ ক’রে এখন সেই বাক্য সত্য কর। অর্জুন অধোমুখে অনিচ্ছুর ন্যায় বললেন, যাঁরা অবধ্য তাঁদের বধ ক’রে নরকের পথ স্বরূপ রাজ্যলাভ ভাল, না বনবাসে কষ্টভোগ করা ভাল? কৃষ্ণ, তোমার কথাই রাখব, ভীষ্মের কাছে রথ নিয়ে চল, কুরুপিতামহকে নিপাতিত করব। ভীষ্মের বাণবর্ষণে অর্জুনের রথ আচ্ছন্ন হ’ল, কৃষ্ণ অবিচলিত হয়ে আহত অশ্বদের বেগে চালাতে লাগলেন।[১]

 ভীষ্ম ও পাণ্ডবগণের শরবর্ষণে দুই পক্ষেরই বহু সৈন্য বিনষ্ট হ’ল। পাণ্ডবসৈন্যগণ ভয়ার্ত হয়ে ভীষ্মের অমানুষিক বিক্রম দেখতে লাগল। এই সময়ে সূর্যাস্ত হ’ল, পাণ্ডব ও কৌরবগণ যুদ্ধে বিরত হয়ে নিজ নিজ শিবিরে চ’লে গেলেন। দুর্যোধন ও তাঁর ভ্রাতারা বিজয়ী ভীষ্মের প্রশংসা করতে লাগলেন।

  1. ৯-পরিচ্ছেদে আছে, অর্জুনের মৃদু যদ্ধ দেখে কৃষ্ণ রথ থেকে নেমে ভীষ্মকে মারবার জন্য নিজেই ধাবিত হলেন। মহাভারতে এই স্থানে সেই ঘটনার পুনরুক্তি আছে।