পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভীষ্মপর্ব
৪০৩

 কৃষ্ণ বললেন, তুমি ক্ষাত্রধর্মানুসারে ভীষ্মবধের প্রতিজ্ঞা করেছ, এখন পশ্চাৎপদ হচ্ছ কেন? তুমি ওই দুর্ধর্ষ ক্ষত্রিয় বীরকে রথ থেকে নিপাতিত কর, নতুবা তোমার জয়লাভ হবে না। দেবতারা পূর্বেই জেনেছেন যে ভীষ্ম যমালয়ে যাবেন, এর অন্যথা হবে না। মহাবুদ্ধি বৃহস্পতি ইন্দ্রকে কি বলেছিলেন শোন—বয়োজ্যেষ্ঠ বৃদ্ধ গুণবান পুরুষও যদি আততায়ী হয়ে আসেন তবে তাঁকে বধ করবে।

১৭। ভীষ্মের পতন

(দশম দিনের যুদ্ধ)

 পরদিন সূর্যোদয় হ’লে পাণ্ডবগণ সর্বশত্রুজয়ী ব্যূহ রচনা ক’রে শিখণ্ডীকে সম্মুখে রেখে যুদ্ধ করতে গেলেন। ভীম অর্জুন দ্রৌপদীপুত্রগণ অভিমন্যু সাত্যকি চেকিতান ও ধৃষ্টদ্যুম্ন ব্যূহের বিভিন্ন স্থানে রইলেন। যুধিষ্ঠির নকুল-সহদেব বিরাট কেকয়-পঞ্চভ্রাতা ও ধৃষ্টকেতু পশ্চাতে গেলেন। ভীষ্ম কৌরবসেনার অগ্রভাগে রইলেন; দুর্যোধনাদি দ্রোণ অশ্বত্থামা কৃপ ভগদত্ত কৃতবর্মা শকুনি বৃহদ্‌বল প্রভৃতি পশ্চাতে গেলেন।

 শিখণ্ডীকে অগ্রবর্তী ক’রে অর্জুন প্রভৃতি শরবর্ষণ করতে করতে ভীষ্মের প্রতি ধাবিত হলেন। ভীম নকুল সহদেব সাত্যকি প্রভৃতি মহারথগণ কৌরবসৈন্য ধ্বংস করতে লাগলেন। ভীষ্ম জীবনের আশা ত্যাগ ক’রে যুদ্ধে অবতীর্ণ হলেন, তাঁর শরাঘাতে পাণ্ডবপক্ষের বহু রথী অশ্বারোহী গজারোহী ও পদাতি বিনষ্ট হ’ল। শিখণ্ডী তাঁকে শরাঘাত করলে ভীষ্ম একবার মাত্র তাঁর দিকে দৃষ্টিপাত ক’রে সহাস্যে বললেন, তুমি আমাকে প্রহার কর বা না কর আমি তোমার সঙ্গে যুদ্ধে করব না, বিধাতা তোমাকে শিখণ্ডিনী রূপে সৃষ্টি করেছিলেন, এখনও তুমি তাই আছ। ক্রোধে ওষ্ঠপ্রান্ত লেহন ক’রে শিখণ্ডী বললেন, মহাবাহু, আপনার পরাক্রম যে ভয়ংকর তা আমি জানি, জামদগ্ন্য পরশুরামের সঙ্গে আপনার যুদ্ধের বিষয়ও জানি, তথাপি নিজের এবং পাণ্ডবগণের প্রিয়সাধনের জন্য নিশ্চয়ই আপনাকে বধ করব। আপনি যুদ্ধ করুন বা না করুন, আমার কাছ থেকে জীবিত অবস্থায় মুক্তি পাবেন না, অতএব এই পৃথিবী ভাল করে দেখে নিন।

 অর্জুন শিখণ্ডীকে বললেন, তুমি ভীষ্মকে আক্রমণ কর, আমি তোমাকে শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা করব, তোমাকে কেউ পীড়ন করতে পারবে না। আজ যদি ভীষ্মকে বধ না ক’রে ফিরে যাও তবে তুমি আর আমি লোকসমাজে হাস্যাস্পদ হব।