পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দ্রোণপর্ব
৪১১

 ভীষ্ম বললেন, কর্ণ, সমুদ্র যেমন নদীগণের, ভাস্কর যেমন সকল তেজের, সাধুজন যেমন সত্যের, উর্বরা ভূমি যেমন বীজের, মেঘ যেমন জীবগণের, তুমিও তেমন বান্ধবগণের আশ্রয় হও। আমি প্রসন্নমনে বলছি, তুমি শত্রুদের সঙ্গে যুদ্ধে কর, কৌরবগণকে উপদেশ দাও, দুর্যোধনের জয়বিধান কর। দুর্যোধনের ন্যায় তুমিও আমার পৌত্রতুল্য। মনীষিগণ বলেন, সজ্জনের সঙ্গে সজ্জনের যে সম্বন্ধ তা জন্মগত সম্বন্ধের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। কৌরবসৈন্য যেমন দুর্যোধনের, সেইরূপ তোমরাও, এই জ্ঞান করে তাদের রক্ষা কর।

 ভীষ্মের চরণে প্রণাম ক’রে কর্ণ সত্বর রণস্থলের অভিমূখে প্রস্থান করলেন।

২। দ্রোণের অভিষেক ও দুর্যোধনকে বরদান

 দুর্যোধন কর্ণকে বললেন, বয়স বিক্রম শাস্ত্রজ্ঞান ও যোদ্ধার উপযুক্ত সমস্ত গণের জন্য ভীষ্ম আমার সেনাপতি হয়েছিলেন। তিনি দশ দিন শত্রুবিনাশ ও আমাদের রক্ষা ক’রে স্বর্গযাত্রায় প্রস্তুত হয়েছেন। এখন তুমি কাকে সেনাপতি করা উচিত মনে কর? কর্ণ বললেন, এখানে যেসকল পুরুষশ্রেষ্ঠ আছেন তাঁরা প্রত্যেকে সেনাপতিত্বের যোগ্য, কিন্তু সকলেই এককালে সেনাপতি হ’তে পারেন না। এঁরা পরস্পরকে স্পর্ধা করেন, একজনকে সেনাপতি করলে আর সকলে ক্ষুণ্ণ হয়ে যুদ্ধে বিরত হবেন। দ্রোণ সকল যোদ্ধার শিক্ষক, স্থবির, মাননীয়, এবং শ্রেষ্ঠ অস্ত্রধর, ইনি ভিন্ন আর কেউ সেনাপতি হ’তে পারেন না। এমন যোদ্ধা নেই যিনি যুদ্ধে দ্রোণের অনুবর্তী হবেন না।

 দুর্যোধন তখনই দ্রোণকে সেনাপতি হবার জন্য অনুরোধ করলেন। দ্রোণ বললেন, রাজা, আমি ষড়ঙ্গ বেদ ও মনুর নীতিশাস্ত্রে অভিজ্ঞ; পাশুপত অস্ত্র ও বিবিধ বাণের প্রয়োগও জানি। তোমার বিজয়কামনায় আমি পাণ্ডবদের সঙ্গে যুদ্ধে করব, কিন্তু ধৃষ্টদ্যুম্নকে বধ করব না, কারণ সে আমাকে বধ করবার জন্যই সৃষ্ট হয়েছে। আমি বিপক্ষের সকল সৈন্য বিনষ্ট করব, কিন্তু পাণ্ডবরা আমার সঙ্গে হৃষ্টমনে যুদ্ধ করবেন না।

 দুর্যোধন দ্রোণাচার্যকে যথাবিধি সেনাপতিত্বে অভিষিক্ত করলেন। দ্রোণ বললেন, রাজা, কুরুশ্রেষ্ঠ গাঙ্গেয় ভীষ্মের পর আমাকে সেনাপতির পদ দিয়ে তুমি আমাকে সম্মানিত করেছ, তার যোগ্য ফল লাভ কর। তুমি অভীষ্ট বর চাও, আজ তোমার কোন, কামনা পূর্ণ করব বল। দুর্যোধন বললেন, রথিশ্রেষ্ঠ, এই বর