পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪১২
মহাভারত

দিন যে যুধিষ্ঠিরকে জীবিত অবস্থায় আমার কাছে ধ’রে আনবেন। দ্রোণ বললেন, যুধিষ্ঠির ধন্য, তুমি তাঁকে ধ’রে আনতে বলছ, বধ করতে চাচ্ছ না। আমি তাঁকে মারব এ বোধ হয় তুমি অসম্ভব মনে কর, অথবা ধর্মরাজ যুধিষ্ঠিরের দ্বেষ্টা কেউ নেই তাই তুমি তাঁর জীবনরক্ষা করতে চাও। অথবা পাণ্ডবগণকে জয় ক’রে তুমি তাঁদের রাজ্যাংশ ফিরিয়ে দিতে ইচ্ছা কর। যুধিষ্ঠির ধন্য, তাঁর জন্ম সফল, অজাতশত্রু নামও সার্থক, কারণ তাঁকে তুমি স্নেহ কর।

 দ্রোণের এই কথা শুনে দুর্যোধন তাঁর হৃদ্‌গত অভিপ্রায় প্রকাশ করে ফেললেন, কারণ বৃহস্পতিতুল্য লোকেও মনোভাব গোপন করতে পারেন না। দুর্যোধন বললেন, আচার্য, যুধিষ্ঠিরকে মারলে আমার বিজয়লাভ হবে না, অন্য পাণ্ডবরা আমাদের হত্যা করবে। তাদের যদি একজনও অবশিষ্ট থাকে তবে সে আমাদের নিঃশেষ করবে। কিন্তু যদি সত্যপ্রতিজ্ঞ যুধিষ্ঠিরকে ধরে আনা যায় তবে তাঁকে পুনর্বার দ্যূতক্রীড়ায় পরাস্ত করলে তাঁর অনুগত ভ্রাতারাও আবার বনে যাবে। এইপ্রকার জয়ই দীর্ঘকাল স্থায়ী হবে, সেজন্য ধর্মরাজকে বধ করতে ইচ্ছা করি না।

 দুর্যোধনের কুটিল অভিপ্রায় জেনে বুদ্ধিমান দ্রোণ চিন্তা করে এই বাক্‌ছলযুক্ত বর দিলেন—যুদ্ধকালে অর্জুন যদি যুধিষ্ঠিরকে রক্ষা না করেন তবে ধরে নিও যে যুধিষ্ঠির আমাদের বশে এসেছেন। বৎস, অর্জুন সুরাসুরেরও অজেয়, তাঁর কাছ থেকে আমি যুধিষ্ঠিরকে হরণ করতে পারব না। অর্জুন আমার শিষ্য, কিন্তু যুবা, পুণ্যবান ও একাগ্রচিত্ত, তিনি ইন্দ্র ও রুদ্রের নিকট অনেক অস্ত্র লাভ করেছেন এবং তোমার প্রতি তাঁর ক্রোধ আছে। তুমি যে উপায়ে পার অর্জুনকে অপসারিত করো, তা হ’লেই ধর্মরাজ বিজিত হবেন। অর্জুন বিনা যুধিষ্ঠির যদি মুহূর্তকালও যুদ্ধক্ষেত্রে আমার সম্মুখে থাকেন তবে তাঁকে নিশ্চয় তোমার বশে আনব।

 দ্রোণের এই কথা শুনে নির্বোধ ধার্তরাষ্ট্রগণ মনে করলেন যে যুধিষ্ঠির ধরাই পড়েছেন। তাঁরা জানতেন যে দ্রোণ পাণ্ডবদের পক্ষপাতী। তাঁর প্রতিজ্ঞা দৃঢ় করবার জন্য দুর্যোধন দ্রোণের বরদানের সংবাদ সৈন্যগণের মধ্যে ঘোষণা করলেন।