পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪১৪
মহাভারত

 কুরুসৈন্য পরাজিত হচ্ছে দেখে কর্ণপুত্র বৃর্ষসেন রণস্থলে এসে নকুলপুত্র শতানীকের সঙ্গে যুদ্ধ করতে লাগলেন। দ্রৌপদীর অপর পুত্রগণ ভ্রাতা শতানীককে রক্ষা করতে এলেন। পাণ্ডবগণের সঙ্গে পাঞ্চাল কেকয় মৎস্য ও সঞ্জয় যোদ্ধগণ অস্ত্র উদ্যত ক’রে উপস্থিত হলেন। কৌরবসৈন্য মর্দিত ও ভগ্ন হচ্ছে দেখে দ্রোণ বললেন, বীরগণ, তোমরা পালিও না। এই বলে তিনি সুধিষ্ঠিরের প্রতি ধাবিত হলেন। যুধিষ্ঠিরের সৈন্যরক্ষক পাঞ্চালবীর কুমার দ্রোণের বক্ষে শরাঘাত করলেন, দ্রোণও পাণ্ডবপক্ষীয় বীরগণের প্রতি শরক্ষেপণ করতে লাগলেন। পাঞ্চালবীর ব্যাঘ্রদত্ত ও সিংহসেন দ্রোণের হস্তে নিহত হলেন। দ্রোণকে যুধিষ্ঠিরের নিকটবর্তী দেখে কৌরবসৈন্যগণ বলতে লাগল, আজ রাজা দুর্যোধন কৃতার্থ হবেন, যুধিষ্ঠির ধরা পড়বেন। এই সময়ে অর্জুন দ্রুতবেগে দ্রোণসৈন্যের প্রতি ধাবিত হয়ে শরজালে সর্বদিক আচ্ছন্ন করলেন। দ্রোণ দুর্যোধন প্রভৃতি যুদ্ধ থেকে বিরত হলেন, শত্রুপক্ষকে ত্রস্ত ও যুদ্ধে অনিচ্ছু দেখে অর্জুনও পাণ্ডবসৈন্যগণকে নিরস্ত করলেন।


॥ সংশপ্তকবধপর্বাধ্যায় ॥

৪। সংশপ্তকগণের শপথ

 দুই পক্ষের যোদ্ধারা নিজ নিজ শিবিরে ফিরে এলেন। দ্রোণ দুঃখিত ও লজ্জিত হয়ে দুর্যোধনকে বললেন, রাজা, আমি পূর্বেই বলেছি যে ধনঞ্জয় উপস্থিত থাকলে দেবতারাও যুধিষ্ঠিরকে ধরতে পারবেন না। কৃষ্ণার্জুন অজেয়, এ বিষয়ে তুমি সন্দেহ ক’রো না। কোনও উপায়ে অর্জুনকে সরাতে পারলেই যুধিষ্ঠির তোমার বশে আসবেন। কেউ যদি অর্জুনকে যুদ্ধে আহ্বান ক’রে অন্যত্র নিয়ে যায় তবে অর্জুন জয়লাভ না ক’রে কখনই ফিরবেন না, সেই অবকাশে আমি পাণ্ডবসৈন্য ভেদ ক’রে ধৃষ্টদ্যুম্নের সমক্ষেই যুধিষ্ঠিরকে হরণ করব।

 দ্রোণাচার্যের কথা শুনে ত্রিগর্তরাজ সুশর্মা ও তাঁর ভ্রাতারা বললেন, অর্জুন সর্বদা অকারণে আমাদের অপমান করেন সেজন্য ক্রোধে আমাদের নিদ্রা হয় না। রাজা, যে কার্য আপনার প্রিয় আমাদের যশস্ব তা আমরা করব, অর্জুনকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে গিয়ে বধ করব। আমরা সত্য প্রতিজ্ঞা করছি— পৃথিবী অর্জুনহীন অথবা ত্রিগর্তহীন হবে।