পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪১৬
মহাভারত

৫। সংশপ্তকগণের যুদ্ধ ― ভগদত্তবধ

(দ্বাদশ দিনের যুদ্ধ)

 বর্ষাকালে স্ফীতসলিলা গঙ্গা ও সরযু যেমন বেগে মিলিত হয় সেইরূপ উভয় পক্ষের সেনা যুদ্ধে মিলিত হ’ল। অর্জুনকে আসতে দেখে সংশপ্তকগণ হৃষ্ট হয়ে চিৎকার করতে লাগলেন। অর্জুন সহাস্যে কৃষ্ণকে বললেন, দেবকীনন্দন, ত্রিগর্তভ্রাতারা আজ যুদ্ধে মরতে আসছে, তারা রোদন না ক’রে হর্ষপ্রকাশ করছে।

 অর্জুন মহারবে দেবদত্ত শঙ্খ বাজালেন, তার শব্দে বিত্রস্ত হয়ে সংশপ্তকবাহিনী কিছুক্ষণ পাষাণপ্রতিমার ন্যায় নিশ্চেষ্ট হয়ে রইল, তার পর দুই পক্ষ থেকে প্রবল শরবর্ষণ হ’তে লাগল। অর্জুনের শরাঘাতে নিপীড়িত হয়ে ত্রিগর্তসেনা ভগ্ন হ’ল। সুশর্মা বললেন, বীরগণ, ভয় নেই, পালিও না, তোমরা সকলের সমক্ষে ঘোর শপথ করেছ, এখন দুর্যোধনের সৈন্যদের কাছে ফিরে গিয়ে কি বলবে? পশ্চাৎপদ হ’লে লোকে আমাদের উপহাস করবে, অতএব সকলে যথাশক্তি যুদ্ধ কর। তখন সংশপ্তকগণ এবং নারায়ণী সেনা[১] মৃত্যুপণ ক’রে পুনর্বার যুদ্ধে প্রবৃত্ত হ’ল।

 অর্জুন বললেন, কৃষ্ণ, এই সংশপ্তকগণ জীবিত থাকতে রণভূমি ত্যাগ করবে না, তুমি ওদের দিকে রথ নিয়ে চল। কিছুক্ষণ বাণবর্ষণের পর অর্জুন ত্বাষ্ট্র[২] অস্ত্র নিক্ষেপ করলেন। তখন সহস্র সহস্র বিভিন্ন প্রতিমূর্তি আবির্ভূত হ’ল, বিপক্ষ সৈন্যগণ বিমূঢ় হয়ে ‘এই অর্জুন, এই গোবিন্দ’ ব’লে পরস্পরকে হতা করতে লাগল। অর্জুন সহাস্যে ললিত্থ মালব মাবেল্লক ও ত্রিগর্ত যোদ্ধাদের নিপীড়িত করতে লাগলেন। বিপক্ষের শরজালে আচ্ছন্ন হয়ে অর্জুনের রথ অদৃশ্য হ’ল, তিনি নিহত হয়েছেন মনে ক’রে শত্রুসৈন্যগণ সহর্ষে কোলাহল ক’রে উঠল। অর্জুন বায়ব্যাস্ত্র মোচন করলেন, প্রবল বায়ু প্রবাহে সংশপ্তকগণ এবং তাদের হস্তী রথ অশ্ব প্রভৃতি শুষ্ক পত্রের ন্যায় বিক্ষিপ্ত হ’ল। অর্জুন ক্ষিপ্রহস্তে তীক্ষ্ণ শরের আঘাতে সহস্র সহস্র শত্রুসৈন্য বধ করলেন। সংশপ্তকগণ বিনষ্ট হয়ে ইন্দ্রলোকে যেতে লাগল।

 অর্জুন যখন প্রমত্ত হয়ে যুদ্ধ করছিলেন তখন দ্রোণ গরুড় ব্যূহ রচনা

  1. কৃষ্ণ দুর্যোধনকে দিয়েছিলেন। উদ্‌যোগপর্ব ২-পরিচ্ছেদ দ্রষ্টব্য।
  2. ত্বষ্টা—বিশ্বকর্মা।