পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দ্রোণপর্ব
৪১৯

আমার চতুর্থ মূর্তি গাত্রোত্থান করে যোগ্য ব্যক্তিদের বর দেয়। সেই সময়ে পৃথিবীর প্রার্থনায় তাঁর পুত্র নরককে আমি বৈষ্ণবাস্ত্র দিয়েছিলাম। প্রাগ্‌জ্যোতিষরাজ ভগদত্ত নরকাসুরের কাছ থেকে এই অস্ত্র পেয়েছিলেন। জগতে এই অস্ত্রের অবধ্য কেউ নেই, তোমার রক্ষার নিমিত্তই আমি বৈষ্ণবাস্ত্র গ্রহণ করে মাল্যে পরিবর্তিত করেছি। ভগদত্ত পরমাস্ত্রহীন হয়েছেন, এখন ওই মহাসুরকে বধ কর।

 অর্জুন নারাচ নিক্ষেপ করলেন, তার আঘাতে ভগদত্তের মহাহস্তী আর্তনাদ করে নিহত হ’ল। অর্জুন তখনই অর্ধচন্দ্র বাণে ভগদত্তের হৃদয় বিদীর্ণ করলেন, ভগদত্ত প্রাণহীন হয়ে প’ড়ে গেলেন। তার পর অর্জুন রণস্থলের দক্ষিণ দিকে গেলেন, শকুনির ভ্রাতা কৃষক ও অচল তাঁকে বাধা দিতে এলেন। অর্জুন একই শরে দু’জনকে বধ করলেন। বহুমায়াবিশারদ শকুনি মায়া দ্বারা কৃষ্ণার্জুনকে সম্মোহিত করবার চেষ্টা করলেন, কিন্তু অর্জুনের শরবর্ষণে সকল মায়া দূরীভূত হ’ল, শকুনি ভীত হয়ে পালিয়ে গেলেন।

 দ্রোণের সঙ্গে ধৃষ্টদ্যুম্ন প্রভৃতির অদ্ভুত যুদ্ধ হ’তে লাগল। অশ্বত্থামা নীল রাজার মস্তক ছেদন করলেন। পাণ্ডবপক্ষীয মহারথগণ উদ্‌বিগ্ন হয়ে অর্জুনের অপেক্ষা করতে লাগলেন, যিনি তখন অবশিষ্ট সংশপ্তক ও নারায়ণসৈন্য বিনাশ করছিলেন। ভীমসেন প্রাণের মায়া ত্যাগ করে দ্রোণ কর্ণ দুর্যোধন ও অশ্বত্থামার সঙ্গে যুদ্ধ করছেন দেখে সাত্যকি নকুল সহদেব প্রভৃতি তাঁকে রক্ষা করতে এলেন। পাণ্ডববীরগণকে আরও ত্বরান্বিত করবার জন্য ধৃষ্টদ্যুম্ন বললেন, এই সময়। তখন সকলে তুমল রবে দ্রোণের প্রতি ধাবিত হলেন। দ্রোণ শত শত বাণে চেদি পাঞ্চাল ও পাণ্ডবগণকে নিপীড়িত করতে লাগলেন। এমন সময় অর্জুন সংশপ্তকগণকে জয় ক’রে দ্রোণের নিকট উপস্থিত হলেন। যুগান্তকালে উদিত ধূমকেতু যেমন সর্বভূত দহন করে, অর্জুনের অস্ত্রের তেজে সেইরূপ কুরুসৈন্য দগ্ধ হ’তে লাগল। তাদের হাহাকার শুনে কর্ণ আগ্নেয়াস্ত্র প্রয়োগ করলেন, অর্জুন তা শরাঘাতে নিবারিত করে কর্ণের তিন ভ্রাতাকে বধ করলেন। ভীম ও ধৃষ্টদ্যুম্নের খড়্‌গাঘাতে কর্ণপক্ষের পনর জন যোদ্ধা, চন্দ্রবর্মা ও নিষধরাজ বৃহৎক্ষত্র নিহত হলেন।

 তার পর সূর্য অস্তাচলে গেলেন, উভয় পক্ষ ক্লান্ত ও রুধিরাক্ত হয়ে পরস্পরকে দেখতে দেখতে শিবিরে প্রস্থান করলেন।