পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪২০
মহাভারত

॥ অভিমন্যুবধপর্বাধ্যায় ॥

৬। অভিমন্যুবধ

(ত্রয়োদশ দিনের যুদ্ধ)

 অভিমানী দুর্যোধন ক্ষুণ্ণ হয়ে দ্রোণকে বললেন, দ্বিজশ্রেষ্ঠ, আপনি নিশ্চয় মনে করেন যে আমরা বধের যোগ্য, তাই আজ যুধিষ্ঠিরকে পেয়েও ধরলেন না। আপনি প্রীত হয়ে আমাকে বর দিয়েছিলেন, কিন্তু শেষে তার অন্যথা করলেন। সাধু লোকে কখনও ভক্তের আশাভঙ্গ করেন না। দ্রোণ লজ্জিত হয়ে উত্তর দিলেন, আমি সর্বদাই তোমার প্রিয়সাধনের চেষ্টা করি কিন্তু তুমি তা বুঝতে পার না। বিশ্বস্রষ্টা গোবিন্দ যে পক্ষে আছেন এবং অর্জুন যার সেনানী, সে পক্ষের বল ত্র্যম্বক মহাদেব ভিন্ন আর কে অতিক্রম করতে পারেন? সত্য বলছি, আজ আমি পাণ্ডবদের কোনও মহারথকে নিপাতিত করব। আমি এমন ব্যূহ রচনা করব যা দেবতারাও ভেদ করতে পারেন না। তুমি কোনও উপায়ে অর্জুনকে সরিয়ে রেখো।

 পরদিন সংশপ্তকগণ দক্ষিণ দিকে গিয়ে পুনর্বার অর্জুনকে যুদ্ধে আহ্বান করলেন, অর্জুনও তাঁদের সঙ্গে ঘোর যুদ্ধে নিরত হলেন। দ্রোণ চক্রব্যূহ নির্মাণ ক’রে তেজস্বী রাজপুত্রগণকে যথাস্থানে স্থাপিত করলেন। তাঁরা সকলেই রক্ত বসন, রক্ত ভূষণ ও রক্ত পতাকায় শোভিত হলেন এবং মাল্যধারণ ক’রে অগুরু-চন্দনে চর্চিত হয়ে অভিমন্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করতে চললেন। দুর্যোধনের পত্র লক্ষ্মণ এই দশ সহস্র যোদ্ধার অগ্রবর্তী হলেন। কৌরবসেনার মধ্যদেশে দুর্যোধন কর্ণ কৃপ ও দুঃশাসন, এবং সম্মুখভাগে সেনাপতি দ্রোণ, সিন্ধুরাজ জয়দ্রথ, অশ্বত্থামা, ধৃতরাষ্ট্রের ত্রিশ জন পুত্র, শকুনি, শল্য ও ভূরিশ্রবা রইলেন।

 দ্রোণকে আর কেউ বাধা দিতে পারবে না এই স্থির করে যুধিষ্ঠির অভিমন্যুর উপর অত্যন্ত গুরুভার অর্পণ করলেন। তিনি তাঁকে বললেন, বৎস, অর্জুন ফিরে এসে যাতে আমাদের নিন্দা না করেন এমন কার্যকর। আমরা চক্রব্যূহ ভেদের প্রণালী কিছুই জানি না, কেবল অর্জুন কৃষ্ণ প্রদ্যুম্ন আর তুমি এই চার জন চক্রব্যূহ ভেদ করতে পার। তোমার পিতৃগণ মাতুলগণ এবং সমস্ত সৈন্য তোমার নিকট বর প্রার্থনা করছে, তুমি দ্রোণের চক্রব্যূহ ভেদ কর।

 অভিমন্যু বললেন, পিতৃগণের জয়কামনায় আমি অবিলম্বে দ্রোণের ব্যূহমধ্যে প্রবেশ করব। কিন্তু পিতা আমাকে প্রবেশের কৌশলই শিখিয়েছেন, যদি