পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪২২
মহাভারত

দুঃশাসন শল্য প্রভৃতিকে বললেন, সকল ক্ষত্রিয়ের আচার্য শ্রেষ্ঠ ব্রহ্মজ্ঞ দ্রোণ অর্জুনের ওই মূঢ় পুত্রকে বধ করতে ইচ্ছা করেন না, শিষ্যের পুত্র বলে ওকে রক্ষা করতে চান। বীরগণ, আপনারা ওকে বধ করুন, বিলম্ব করবেন না। দুঃশাসন বললেন, আমিই ওকে মারব।

 দুঃশাসনকে দেখে অভিমন্যু বললেন, ভাগ্যক্রমে আজ ধর্মত্যাগী নিষ্ঠুর কটুভাষী বীরকে যুদ্ধে দেখছি। মূর্খ, তুমি দ্যূতসভায় জয়লাভে উন্মত্ত হয়ে কটুবাক্যে যুধিষ্ঠিরকে ক্রোধিত করেছিলে, তোমার পাপকর্মের ফলভোগের জন্য আমার কাছে এসে পড়েছ, আজ তোমাকে শাস্তি দিয়ে পাণ্ডবগণের ও দ্রৌপদীর নিকট ঋণমুক্ত হব। এই ব’লে অভিমন্যু দুঃশাসনকে শরাঘাত করলেন। দুঃশাসন মূর্ছিত হয়ে পড়ে গেলেন, তাঁর সারথি তাঁকে সত্বর রণস্থল থেকে সরিয়ে নিয়ে গেল। পাণ্ডবপক্ষীয় যোদ্ধারা অভিমন্যুকে দেখে সিংহনাদ ক’রে দ্রোণের সৈন্যগণকে আক্রমণ করলেন।

 তার পর কর্ণের সঙ্গে অভিমন্যুর যুদ্ধ হ’তে লাগল। অভিমন্যু কর্ণের এক ভ্রাতার শিরশ্ছেদন করলেন এবং কর্ণকেও শরাঘাতে নিপীড়িত ক’রে রণভূমি থেকে দূর করলেন। অভিমন্যুর শরবর্ষণে বিশাল কৌরবসৈন্য ভগ্ন হ’ল, যোদ্ধারা পালাতে লাগলেন, অবশেষে ধৃতরাষ্ট্রের জামাতা সিন্ধু রাজ জয়দ্রথ ভিন্ন আর কেউ রইলেন না। দ্রৌপদীহরণের পর ভীমের হস্তে নিগৃহীত হয়ে জয়দ্রথ মহাদেবের আরাধনা ক’রে এই বর পেয়েছিলেন যে অর্জুন ভিন্ন অন্য চার জন পাণ্ডবকে তিনি যুদ্ধে বাধা দিতে পারবেন।

 জয়দ্রথ শরবর্ষণ ক’রে সাত্যকি ধৃষ্টদ্যুম্ন বিরাট দ্রুপদ শিখণ্ডী এবং যুধিষ্ঠির ভীম প্রভৃতিকে নিপীড়িত করতে লাগলেন। অভিমন্যু ব্যূহপ্রবেশের যে পথ করেছিলেন জয়দ্রথ তা রুদ্ধ করে দিলেন। পাণ্ডবপক্ষীয় যোদ্ধারা দ্রোণসৈন্য ভেদ করবার চেষ্টা করলেন, কিন্তু জয়দ্রথ তাঁদের বাধা দিলেন। কুরসৈন্যে বেষ্টিত হয়ে অভিমন্যু একাকী দারুণ যুদ্ধ করতে লাগলেন। শল্যপুত্র রুক্মরথ ও দুর্যোধনপুত্র লক্ষ্মণ অভিমন্যুর হস্তে নিহত হলেন।

 প্রিয় পুত্রের মৃত্যুতে রুদ্ধ হয়ে দুর্যোধন স্বপক্ষের বীরগণকে উচ্চস্বরে বললেন, আপনারা অভিমন্যুকে বধ করুন। তখন দ্রোণ রূপ কর্ণ অশ্বত্থামা বৃহদ্‌বল ও কৃতবর্মা এই ছয় রথী অভিমন্যুকে বেষ্টন করলেন। কোশলরাজ বৃহদ্‌বল এবং আরও অনেক যোদ্ধা অভিমন্যুর বাণে নিহত হলেন। দ্রোণ বললেন, কুমার অভিমন্যু তার পিতার ন্যায় সর্ব দিকে দ্রুত বিচরণ ক’রে এত ক্ষিপ্রহস্তে