পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহাভারত
৪২৩

শর সন্ধান ও মোচন করছে যে কেবল তার মণ্ডলাকার ধনুই দেখা যাচ্ছে। সুভদ্রানন্দনের শরক্ষেপণে আমার প্রাণসংশয় আর মোহ হ’লেও আমি অতিশয় আনন্দলাভ করছি, অর্জুনের সঙ্গে এর প্রভেদ দেখছি না।

 কর্ণ শরাহত হয়ে দ্রোণকে বললেন, রণস্থলে থাকা আমার কর্তব্য, শুধু এই কারণে অভিমন্যু কর্তৃক নিপীড়িত হয়েও আমি এখানে রয়েছি। মৃদু হাস্য করে দ্রোণ বললেন, অভিমন্যুর কবচ অভেদ্য, আমিই ওর পিতাকে কবচধারণের প্রণালী শিখিয়েছিলাম। মহাধনুর্ধর কর্ণ, যদি পার তো ওর ধনু ছিন্ন কর অশ্ব সারথি বিনষ্ট কর, তার পর পশ্চাৎ থেকে ওকে প্রহার কর। যদি বধ করতে চাও তবে ওকে রথহীন ও ধনুহীন কর।

 দ্রোণের উপদেশ অনুসারে কর্ণ পিছন থেকে অভিমন্যুর ধনু ছিন্ন করলেন এবং অশ্ব ও সারথি বধ করলেন। তার পর দ্রোণ কৃপ কর্ণ অশ্বত্থামা দুর্যোধন ও শকুনি নিষ্করণ হয়ে রথচ্যুত বালক অভিমন্যুর উপর শরাঘাত করতে লাগলেন। অভিমন্যু খড়্‌গ ও চর্ম নিয়ে রথ থেকে লাফিয়ে নামলেন। দ্রোণ ক্ষুরপ্র অস্ত্রে অভিমন্যুর খড়্‌গের মুষ্টি কেটে ফেললেন। অভিমন্যু চক্র নিয়ে ধাবিত হলেন, বিপক্ষ বীরগণের শরাঘাতে তাও ছিন্ন হ’ল। তখন তিনি গদা নিয়ে যুদ্ধ করতে লাগলেন। এই সময়ে দুঃশাসনের পুত্র অভিমন্যুর মস্তকে গদাঘাত করলেন, অভিমন্যু অচেতন হয়ে প’ড়ে গেলেন।

 জগৎ তাপিত ক’রে সূর্য যেমন অস্তে যান সেইরূপ কৌরবসেনা নিপীড়িত ক’রে অভিমন্যু প্রাণশূন্যদেহে ভূপতিত হলেন। গগনচ্যুত চন্দ্রের ন্যায় তাঁকে নিপতিত দেখে গগনচারিগণ বিলাপ করতে লাগলেন। পলায়মান পাণ্ডবসৈন্যগণকে যুধিষ্ঠির বললেন, বীর অভিমন্যু যদ্ধে পরাঙ্‌মুখ হন নি, তিনি স্বর্গে গেছেন। তোমরা স্থির হও, ভয় দূর কর, আমরা যুদ্ধে শত্রুদের জয় করব। কৃষ্ণার্জুনের তুল্য যোদ্ধা অভিমন্যু দশ সহস্র শত্রুসৈন্য ও মহাবল বৃহদ্‌বলকে বধ ক’রে নিশ্চয় ইন্দ্রলোকে গেছেন, তাঁর জন্য শোক করা উচিত নয়। তার পর সায়াহ্নকাল উপস্থিত হ’লে শোকমগ্ন পাণ্ডবগণ এবং রুধিরাক্ত কৌরবগণ যুদ্ধে বিরত হয়ে নিজ নিজ শিবিরে প্রস্থান করলেন।


 ধৃতরাষ্ট্রকে অভিমন্যু বধের বৃত্তান্ত শুনিয়ে সঞ্জয় বললেন, মহারাজ, দ্রোণ কর্ণ প্রভৃতি ছ জন মহারথ একজনকে নিপাতিত করলেন—এ আমরা ধর্মসংগত মনে করি না।