পাতা:মহুয়া-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/৫

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

কবিতার সঙ্গে যদি এদের এক পংক্তিতে বসাও তা’হলে তাদের বর্ণভেদ অত্যন্ত পরিস্ফুট হ’য়ে উঠ্‌বে। কিন্তু আমার সন্দেহ হ’চ্ছে কিছু যেন অত্যুক্তি করা হ’লো। ফরমাস ব্যাপারটা মোটর গাড়ির ষ্টার্টার-এর মতো। চালনাটা শুরু ক’রে দেয় কিন্তু তার প’রে মোটরটা চলে আপন মোটরিক্ প্রকৃতির তাপে। প্রথম ধাক্কাটা একেবারেই ভুলে যায়। মহুয়ার কবিতাগুলিও লেখবার বেগে ফরমাসের ধাক্কা নিঃসন্দেহই সম্পূর্ণ ভুলেছে—কল্পনার আন্তরিক তড়িৎ-শক্তি আপন চিরন্তনী প্রেরণায় তাদের চালিয়ে নিয়ে গেছে। প্রথম হাতল ঘোরানো হতেও পারে বাইরের থেকে, কিন্তু সচলতা সুরু হবা-মাত্রই লেখবার আনন্দই সারথী হ’য়ে বসে। এই জন্য আমার বিশ্বাস তোমরা এই লেখার মধ্যে নতুন কিছু পাবে, আকারে এবং প্রকারে। নতুন লেখার ঝোঁক যখন চিত্তের মধ্যে এসে পড়ে তখন তা’রা পূর্ব্বদলের পুরানো পরিত্যক্ত বাসায় আশ্রয় নিতে চায় না, নতুন বাসা না বাঁধতে পারলে তাদের মানায় না, কুলোয় না। ক্ষণিকার বাসা আর বলাকার বাসা এক নয়।”

 “আমি নিজে মহুয়ার কবিতার মধ্যে দুটো দল দেখ্‌তে পাই। একটি হ’চ্ছে নিছক গীতি-কাব্য, ছন্দ ও ভাষার ভঙ্গীতেই তা’র লীলা। তাতে প্রণয়ের প্রসাধনকলা মুখ্য। আর-একটিতে ভাবের আবেগ প্রধান স্থান নিয়েছে, তাতে প্রণয়ের সাধন-বেগই প্রবল।”

 “মহুয়ার “মায়া” নামক কবিতায় প্রণয়ের এই দুই ধারার পরিচয় দেওয়া হ’য়েছে। প্রেমের মধ্যে সৃষ্টি-শক্তির ক্রিয়া প্রবল। প্রেম সাধারণ মানুষকে অসাধারণ ক’রে রচনা করে—নিজের ভিতরকার বর্ণে রসে রূপে। তা’র সঙ্গে যোগ দেয় বাইরের প্রকৃতি-থেকে নানা গান গন্ধ, নানা আভাস। এম্‌নি ক’রে অন্তরে বাহিরের মিলনে চিত্তের নিভৃত- লোকে প্রেমের অপরূপ প্রসাধন নির্ম্মিত হ’তে থাকে— সেখানে ভাবে ভঙ্গীতে সাজে সজ্জায় নূতন নূতন প্রকাশের জন্য ব্যাকুলতা, সেখানে