পাতা:মাঝির ছেলে - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১০

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
মাঝির ছেলে

 সতর আঠার বছর বয়সে তাই নাগার গায়ের জোর অনেক মাঝির চেয়ে বেশী।


 তারপর আধঘণ্টা দেরি করে এক সময়ে স্টীমার এল। ঘাটে ভিড়বার ইচ্ছাই যেন নেই এমনি ভাবে খানিকটা এগিয়ে গিয়ে চক্রাকারে পাক দিয়ে ঘাটে এসে ভিড়ল। জেটিতে ততক্ষণে ছোটখাট ভিড় জমে গেছে। স্টীমারের যাত্রী, নৌকার মাঝি আর আটচালার দোকানের লোক বেশী নয়, আশেপাশের গ্রাম থেকেই লোক এসেছে বেশী। অনেকে এসেছে চিঁড়া মুড়ি, গুড়ের সন্দেশ, জ্বাল দেওয়া ঘন দুধ, ঘন দুধের দই, পাতক্ষীর, ফলমূল, তাঁতের কাপড়, গামছা এইসব নানারকম জিনিস বেচতে এবং অনেকে এসেছে নিছক বেড়াতে আর মজা দেখতে। কয়েকজন ভিখারী এসেছে ভিক্ষার আশায়।

 চারিদিকে কত ভাল ভাল খাবার জিনিস, নাগা শুধু একমুঠো খেসারির ডাল চিবিয়ে পেট ভরিয়েছে। পেট ভরিয়েছে? কই পেট তো ভরেছে বলে মনে হয় না! ভরে থাকলেও এতক্ষণে হজম হয়ে গিয়েছে বোধ হয়।

 চরণ মাঝি বেচবার জন্য এক কাঁদি পাকা কলা নিয়ে এসেছিল। দু’দিন আগেও নাগা চরণ মাঝির বাড়ির পিছনে কলাগুলিকে গাছে ঝুলে থাকতে দেখেছে। তখন মনে হয়েছিল, কলাগুলি পাকতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে। এত শীগগির পেকে কলাগুলিতে এমন রঙ ধরল কি করে? আগুনের আঁচে জোর করে পাকিয়েছে নিশ্চয়। কলাগুলির তেমন স্বাদ পাওয়া যাবে না।

 কাছে গিয়ে নাগা বলল, ‘খাসা কলা চরণ কাকা। দু’গা কলা নি আমারে দিবা?’

 চরণ মাঝি বলল, ‘দিমু। দু’গা কলা দুই পয়সা, তরে এক পয়সায় দিমু |’

 ‘পয়সা পামু কই?’

 ‘পয়সা না পাইবা তো কলা খাওনের শখ ক্যান? যা গিয়া ভাগ।’ এতক্ষণে স্টীমার থেকে সিঁড়ি নামিয়ে দেওয়া হয়েছে, লোকজন উঠছে