পাতা:মাঝির ছেলে - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১১

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
মাঝির ছেলে

নামছে। যাত্রী নামলেই অন্য মাঝিদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হারু মাঝি ব্যগ্র কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করছে, ‘কই যাবেন কর্তা? নাও চাই কর্তা?’ যে যা বিক্রি করতে এনেছে সে সেই সেই জিনিসের নাম হাঁকছে। মানুষের কলরবে চারিদিক সরগরম। প্রতিদিন তিনবার বঁশি বাজিয়ে হাজির হয়ে জাহাজ ঘুমন্ত জেটিকে জাগিয়ে দেয়। আনন্দ ও উৎসাহে মন ভরে যায়। আজও অল্পক্ষণের মধ্যেই সে খিদের জ্বালা আর চরণ মাঝির অপমান ভুলে গেল।

 কুলির মাথায় একরাশি মোটঘাট চাপিয়ে এক ভদ্রলোক জাহাজ থেকে নেমে এলেন। সঙ্গে ভদ্রলোকের স্ত্রী, নাগার বয়সী একটি ছেলে, নাগার খুড়তুতো বোন কালীর সমবয়সী একটি মেয়ে এবং ছোট ছোট আরও তিনটি ছেলেমেয়ে। সপরিবারে আর একটি ভদ্রলোকও নামেন নি, সুতরাং ইনিই যে যাদববাবুর দাদা মাধববাবু নাগা সহজেই তা বুঝতে পারল। কৌতুহলী দৃষ্টি মেলে নাগা এদের দেখতে লাগল। কত মোটঘাট সঙ্গে, কি সাজপোশাকের ঘটা! কে জানে এরা নাগার জগতের বাইরে কতদূরের কোন্‌ জগতের মানুষ।

 যাদববাবু খুব সম্ভব জ্যোতিষীকে হাত দেখিয়ে এখনও ফিরতে পারেন নি। ভাই-এর খোঁজেই বোধ হয় মাধববাবু এদিক্‌ ওদিক্‌ তাকাচ্ছিলেন, চরণ মাঝির কলার কাঁদিটার দিকে চোখ পড়ামাত্র ছুটে এলেন। প্রায় রুদ্ধশ্বাসে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কত নিবি রে?’

 চরণ মাঝি আমতা আমতা করে বলল, ‘যা খুশি দ্যান্‌। দুই টাকার কম পারুম না কর্তা।’ স্থানীয় লোক কেউ হলে কথাটি না বলে পালিয়ে যেত, মাধববাবু বললেন, ‘দুই টাকা না তোর মাথা, দেড় টাকায় দিবি?’

 ‘আইজ্ঞা নেন্‌।’

 কলার কাঁদিটা সঙ্গের চাকরের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে মাধববাবু সগৰ্বে চারিদিকে তাকাতে লাগলেন, যেন আর কেউ কিনে ফেলার আগে ডবল দাম দিয়ে কলাগুলি কিনে তিনি মস্ত একটা বাহাদুরির কাজ করেছেন।

 খিদের সময় দু’টি কলা চরণ মাঝি তাকে দেয়নি, নাগার একবার ইচ্ছা হয়েছিল কলাগুলির উচিত দামটা মাধববাবুকে জানিয়ে দেয়। তার পরেই