পাতা:মাঝির ছেলে - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৩

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৭
মাঝির ছেলে

 কিন্তু ঠাকুরমশায় কি তার হাত দেখতে রাজী হবেন! একটু ভয়ে ভয়ে নাগা গিয়ে চক্রবর্তীকে প্রণাম করল। চক্রবর্তী বললেন, ‘কিরে নাগা!’

 ‘আপনার কাছেই আইছিলাম, ঠাকুরমশায়।’

 ‘ক্যান? দরকারডা কি?’

 নাগা এক নিশ্বাসে তার আবেদনটা জানিয়ে দিল। এক জায়গায় সে একটা চাকরি পেয়েছে, তাই একবারটি সে ঠাকুরমশায়কে দিয়ে হাতটা গোণাতে চায়, তার ভাল হবে কি মন্দ হবে। এখন ঠাকুরমশায়কে দক্ষিণা দেবার ক্ষমতা তার নেই, তবে যে দক্ষিণা তিনি চান প্রথমবার মাইনে পাওয়ামাত্র সে ঠাকুরমশায়ের শ্রীচরণে পৌঁছে দিয়ে যাবে।

 চক্রবর্তী চিন্তিত হয়ে বললেন, ‘ধারে কি হাত দ্যাখন যায় রে বলদ? একটা পয়সা আছে না তর কাছে!’

 নাগা বিরস মুখে মাথা নাড়ল। তাকে খুশী করার জন্য হারু মাঝি তার জন্য কালিদাসীর কাছে দু’আনা পয়সা রেখে গিয়েছিল বটে কিন্তু নাগা তা নেয়নি।

 চক্রবর্তী বললেন, ‘এক কাম কর তবে। ঐ যে গাছটা দ্যাখস্‌, একটা এঁচড় পাইড়া আন।’

 নাগা তৎক্ষণাৎ একটির বদলে দুটি এঁচড় পেড়ে আনল। গাছটা অন্যলোকের বটে, কিন্তু ফল-বিশেষতঃ কঁচা ফল-চুরি করতে দোষ নেই। চক্রবর্তী তৎক্ষণাৎ নগদ দক্ষিণা দুটি বাড়ির মধ্যে পাঠিয়ে দিলেন। খুশী হয়ে জানালেন, এবার সময়মত নাগা যা পারে পয়সা-দক্ষিণা যেন দিয়ে যায়, তাতেই চলবে।

 ‘দেখি হাত?’

 ঘুরিয়ে ফিরিয়ে চক্রবর্তী নাগার হাত দেখলেন। মাঝে মাঝে নাগার অতীত ও ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে এমন সব কথা জানাতে লাগলেন যা না জানলেও নাগার কিছু এসে যেত না, শেষে বললেন, ‘তর অদেষ্টে পয়সা আছে নাগা। মস্ত জাহাজের মাঝি হবি তুই।’

 নাগা হাঁ করে তাকিয়ে রইল। ঠাকুরমশায় কি মানুষের বাসনা টের পান? নদীতে জাহাজ দেখলেই নাগার মনে হয়, সে যদি