পাতা:মাঝির ছেলে - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৯
মাঝির ছেলে

আটখামারে নৌকা থেকে নামবার আগে পরেশকে বললেন, ‘তর দুই টাকা জরিমানা পরেশ। ক্যান জানস্? মিছা কথা কইছিলি।’

 পরেশ হাঁ করে তাকিয়ে থাকে।

 ‘তুই একটা আস্ত বাঁদর পরেশ। আমারে তুই ভাবস্ কি শুনি? এতকাল যে আছস আমার কাছে, বিনা দোষে শাস্তি দিতে আমারে তুই কবে দেখছস রে হারামজাদা? আমার হুকুমে শিক তাতানের লাইগা আগুন ধরাইছিলি দুপুর রাইতে, ঘুমের চোখে আগুন নিভাইতে ভুইলা গেছিলি তো গেছিলি, অমন ভুল মাইনষে করে। যখন জিগাইলাম, মিছা কইলি ক্যান?’

 বলে যাদববাবু তাড়াতাড়ি জেটিতে চলে গেলেন। নাগা ছাড়া আরও দু’একজন পরেশের খুন্তি গরম করতে গোয়ালে আগুন ধরানোর কথা জানত, তাদের কাছেই যাদববাবু আগুন লাগার কারণের হদিস পেয়েছিলেন। পরেশ হাতে পায়ে ধরে কাঁদাকাটা আরম্ভ করবে। ভয়ে নৌকা থেকে নামবার আগে এবিষয়ে তিনি কিছুই বলেন নি। কাঁদাকাটা তিনি দু'চোখে দেখতে পারেন না।

 সেদিন বিকালে বাড়ির ছেলেমেয়েদের নিয়ে নাগা বেড়াতে বার হয়েছে, পথে পড়ল নকুল মাঝির বাড়ি। নকুল মাঝির বাড়িতে দুটি পোষা বেজি আছে শুনে কণিকার ফুর্তি কে দ্যাখে! সবাইকে নিয়ে হুড়মুড় করে সে ভেতরে ঢুকে পড়ল। রূপা আর রূপার মা ঢেঁকি-ঘরে চিঁড়া কুটছিল, বেরিয়ে এসে সবাইকে দেখে দু’জনে প্রায় একসঙ্গে ‘ও মা’ বলে দিশেহারা হয়ে গেল।

 নাগা বলল, ‘রাম লক্ষ্মণরে আন দেখি রূপা, খুকী দেখব।’

 কেরোদিন কাঠের ভাঙ্গা একটা বাক্সে রামলক্ষ্মণ থাকে, বাক্স এনে ওপরের চৌকো একটা ফাঁকের মুখ থেকে ছোটখাট পিাড়িটা সরিয়ে নিতে তারা বেরিয়ে এল

 কণিকা বলল, ‘পালাবে না?’

 রূপা বলল, ‘হ, পালায়, আবার ফির‌্যা আসে। মাছ দেই যে?’

 এদিকে রূপার মার, দিশেহারা ভাব তখনো কাটে নি, বাবুদের বাড়ির