পাতা:মাঝির ছেলে - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মাঝির ছেলে
৩০

ছেলেমেয়েরা বাড়িতে এসেছে, কি দিয়ে সে তাদের অভ্যর্থনা করবে। বসবার জন্য দু’টো পিঁড়ি আর ছেঁড়া একটা চাটাই এনে দেয়, লাড়ু এনে সকলের হাতে দেয়। আর ব্যস্ত হয়ে ঘরে-বাইরে ছুটোছুটি করে।

 বেজি দু’টিও কম। চঞ্চল নয়, খেলার ছলে একটু তারা মারামারি করে, উঠানের আরেক প্রান্তে ছুটে গিয়ে রূপার ডাক শুনে ফিরে আসে, তারপর আবার চোখের পলকে ঘরের মধ্যে ঢুকে যায়। ডাক দিয়ে আবার তাদের ফিরিয়ে এনে রূপা দু’টি হাত বাড়িয়ে দিতে হাত বেয়ে দু’জনেই তার কাঁধে উঠে পড়ে। মুগ্ধ হয়ে তাদের দেখতে দেখতে কণিকা বলে, ‘আমাকে দেবে বেজি দু’টো, পয়সা দেব?’

 রূপা ঘাড় নেড়ে বলে, ‘উহু, বেচুম না।’

 ‘একটা দাও?’

 ‘তা কি দেওন যায়? রাম লক্ষ্মণে ছাড়াছাড়ি করলে একটাও বঁচিব না।’ রূপার চোখ হঠাৎ ছলছল করে আসে, ‘বাচ্চা থাকলে তোমারে নিয্যস দিতাম বইন। অদৃষ্টর কথা কমু কি, দুইটা বাচ্চা হইছিল, দুইটাই মইরা গেছে।’

 খোকা হেসে উঠল, ‘রামলক্ষ্মণের বাচ্চা!’

 চোখ মুছে রূপা ফোঁস করে উঠল, ‘নাম স্যান থুইছি। রামলক্ষ্মণ, বাচ্চা হইব না ক্যান? তোমাগো বড়লোকের ঘরে হয় না বইলা—’

 রূপার মেজাজের খবর নাগা জানত, সে তাড়াতাড়ি বলল, ‘চুপ যা রূপা, থাম্।’

 তারপর বেড়াবার সমস্ত সময়টা কণিকা মুখ ভার করে রইল, ফেরবার পথে হঠাৎ বলে উঠল, ‘মেয়েটা কি ঝগড়াটে! ছোটলোকের মেয়ে তো, আর কত হবে! একটা বেঁজি। চাইলাম বলে—’

 রূপার ব্যবহারে নাগা নিজেই লজ্জাবোধ করছিল, রূপাকে সমর্থন করার জন্য বলল, ‘না না, বেজির লাইগা না, খোকাবাবু হাসল কিনা, তাই?

 কণিকা আরও রাগ করে বলল, ‘তুই তো বলবিই ওর হয়ে, একদলের মানুষতো!’