পাতা:মাঝির ছেলে - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪০

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
মাঝির ছেলে
৩৪

দোষ কি শুনি? ও তো আর গায়ে পড়ে মিছিমিছি মারে নি, গাল দিয়েছে তবে মেরেছে।’

 মাধববাবু। গর্জন করে বললেন, ‘বুড়োমি করিস না কণি!’

 নাগা অবাক্ হয়ে কণিকার দিকে তাকিয়ে ছিল। এতগুলি মানুষ চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে, এবারকার মত তাকে ক্ষমা করার কথাটা কারো মুখে শোনা গেল না, এই মেয়েট শুধু তার হয়ে ওকালতি করছে! না, কণিকা তাকে কেবল মাইনে করা চাকর ভাবে না, তার জন্য সত্যি ওর মনে দরদ আছে। নাগা খুশী হয়ে উঠল, এতক্ষণ তার মধ্যে যে রাগ আর বিরক্তি ফুলে ফেঁপে উঠছিল তাও অনেকটা শান্ত হয়ে গেল।

 ‘শোনেন কর্তা, শোনেন। ছোট কর্তা আমারে রাখছেন, আপনার কথায় যামু ক্যান? ছোট কর্তা খেদাইয়া দেন, যামু গিয়া।’

 মাধববাবু একেবারে লাফিয়ে উঠলেন। ‘কি বললি হারামজাদা! বাড়ি থেকে তোকে তাড়াতে হবে ছোটকর্তার মত নিয়ে। কাল সকাল্লে নয়, তুই এখনি বেরো।’

 বলতে বলতে মাধববাবু এগিয়ে যান নাগার দিকে আর নাগা এক পা পিছু না হটে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। কণিকা কেঁদে ফেলল আর তার মা এসে হাত চেপে ধরলেন মাধববাবুর, ভর্ৎসনা করে বললেন, ‘কি করছ পাগলের মত?’

 কে জানে বাধা না পড়লে কি দাঁড়াত ব্যাপারটা! মাধববাবু গায়ে হাত তুললে তিনি যাদববাবুর দাদা বলেই নাগা চুপ করে সহ্য করে যেত না সমান সমান জবাব দিক বলা কঠিন। যাই হোক মাধববাবুর স্ত্রী এসে মাধববাবুকে থামিয়ে বললেন, আর যাদববাবুর স্ত্রী ভাসুরের সামনে দিয়ে ঘোমটা টেনে এসে নাগাকে চুপি চুপি বললেন, ‘গোলমালে কাম কি? নকুইলার বাড়ি থাক গিয়া দুইটা দিন। কইস আমি কইছি।’

 এও একরকম তাড়িয়ে দেওয়া, কিন্তু মাধববাবুর তাড়িয়ে দেওয়ার মত নয়। ঘরে গিয়ে বিছানাপত্র গুটিয়ে নাগা বেরিয়ে যাচ্ছে, কণিকা এসে কয়েক আনা পয়সা হাতে দিল।

 ‘কাকীমা দিল।’ ‘একটু বোস, কাকীমা ভাত পাঠিয়ে দিচ্ছে, খেয়ে