পরদিন সকালে নাগা সবে বিছানা ছেড়ে উঠেছে, সূর্যও উঠব উঠব করছে, পরেশ তার কাছে এসে হাজির। এসেই নাগার হাত চেপে ধরে সে বলে কি, ‘আমারে মাপ কর নাগা। বিনা দোষে কত কটু কইছি তরে।’
নাগা ছোট কর্তাকে কিছু বলেনি জানতে পেরে সমস্ত রাত মনটা নাকি কেমন কেমন করেছে। পরেশের, একটুও ঘুম হয় নি। সকাল হতেই সে ছুটে এসেছে। বিনিয়ে বিনিয়ে পরেশ এসব কথা বলে আর নাগা ভাবে, ব্যাপারখানা কি, এত, ভালমানুষী কেন? কে জানে কি মতলব আছে লোকটার। তবু এমন করে একজন দোষ স্বীকার কবে মাপ চাইলে, ভালভাবে তার সঙ্গে কথা না বলে তো উপায় থাকে না, নাগাকে তাই বাধ্য হয়েই ভাব করতে হয় পরেশের সঙ্গে।
পরেশ বলে, ‘বিড়ি খা নাগা।’
নাগা বলে, ‘বিড়ি খাই না তো। কাইল শখ কইরা চাইছিলাম।’
তারপর মুখখানা বিষন্ন করে জোরে একটা নিঃশ্বাস ফেলে পরেশ বলে, ‘ছোটকর্তা আমারে খেদাইয়া দিব নাগা।’
নাগা চুপ করে থাকে। পরেশের উদ্দেশ্যটা এবার বোঝা যাচ্ছে।
‘বুড়া বাপ মা না খাইয়া মরব।” নাগা একটু হেসে বলে, ‘না খাইয়া মরব। ক্যান? ছোটকর্তার কাম যারা করে না, তারা পয়সা কামায় না?’
একথায় পরেশ একটু থতমত খেয়ে যায়, জবাবের জন্য একটু ভাবতে হয় তাকে —‘তা কামায়। তবে কি জানস নাগা, অদেষ্টে আমার সুখ নাই। বিয়া করুম ঠিক কইরা থুইছি, ছোটকর্তা খেদাইয়া দিলে মাইরা দিব না।’
নাগা খুশী হয়ে বলে, ‘বিয়া করবা? কার মাইয়া?’
কার মেয়ে সেটা পরেশ এখন প্রকাশ করতে পারে না, একটু গোলমাল আছে ব্যাপারটার মধ্যে, তাই কথাটা গোপন রাখা হয়েছে। কিন্তু বিয়ে যে হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই,—যাদববাবুর কাছে চাকরিটা যদি বজায় থাকে। অবস্থাটা নাগাকে ভাল করে বুঝিয়ে দেবার জন্য পরেশ কত যে আবোল তাবোল বকতে থাকে। তার হিসাব হয় না।