পাতা:মাঝির ছেলে - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৯
মাঝির ছেলে

 বলে, ‘বিত্তান্ত জান? ও আমারে বিয়া করব কইছিল।’ নাগা 'আশ্চর্য হয়ে বলে, ‘পরশা?’

 ‘হ, বাবা শুইনা কইল, উঁহু, তর লগে মাইয়ার বিয়ে দিমু ক্যান, মাইয়া কি আমার ফেলনা? লোক ভাল না তুই। তখন রাইগা কইয়া গেল, আমারে বিয়া করবই করব, যেমন কইরা পারে।’

 পরেশের সঙ্গে নকুলের যে বনে না এটা নাগা আগেই লক্ষ্য করেছিল, এখন কারণটা জেনে নাগার যেন ধাঁধা লেগে গেল। পরেশ যে মেয়েটার কথা বলছিল। সে কি তবে রূপা? কিন্তু যাদববাবুর কাছে তার চাকরি থাকার সঙ্গে রূপাকে বিয়ে করার সম্পর্ক কি? নকুল কি তাকে বলেছে যে যাদববাবুর কাছে যদি তার চাকরি থাকে তবেই সে তার সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেবে? কিন্তু রূপা যে বলল, পরেশের প্রস্তাবে নকুল রাজী হয় নি।

 সুযোগ পেয়েই সে নকুলকে জিজ্ঞাসা করল, ‘পরেশের লগে রূপার নাকি বিয়া দিবা মামু?’

 ‘কেডা কয়?’

 ‘কয় না কেউ, আমিই জিগাইলাম। কথা দিছ নাকি?’ নকুল গম্ভীর হয়ে বলল, ‘না, পরেশ কইছিল বিয়ার কথা, আমি রাজী হই নাই। বজ্জাতটার লগে মাইয়ার বিয়া দিমু ক্যান?’


 সন্ধ্যার স্টীমারে যাদববাবুর আসার কথা; আটখামার থেকে তাকে আনবার জন্য নৌকা যাবে। নাগা ভাবল, যাদববাবু তো কিছু বলেন নি, কাজে কেন সে অবহেলা করবে? দুপুরবেলা নৌকা ছাড়ার সময় সেও উঠে বসল। তাকে বাদ দিয়ে আগের বার আটখামারে যাতায়াত করতে অন্য মাঝিদের বড় কষ্ট হয়েছিল, অর্ধেক পথ গিয়ে যাদববাবু নিজে দাঁড় না ধরলে সেদিন হয়তো দুপুরের স্টীমার ধরাই যেত না। নাগাকে দেখে সকলে খুশী হল।

 খোকা আর কণিকাও আটখামার থেকে বেড়িয়ে আসতে যাচ্ছে। নৌকায় বেড়ানোর সাধ যেন দুজনের মিটবার নয়। দুজনের আগ্রহ দেখে নাগা রীতিমত গর্ব অনুভব করে। এমন নদী, এমন নৌকা, এমন মাঝি