ওরা আর কোথায় পাবে! নদীকে নাগা ভালবাসে, নদীর তীরে জন্ম নিয়ে নদীর বুকে এতদিন কাটিয়েও নদীর বৈচিত্র্য তার কাছে এতটুকু একঘেয়ে হয়ে ওঠে নি। আজও ঘণ্টার পর ঘণ্টা সে চারিদিকে তাকিয়ে নদীর রূপ দেখে কাটিয়ে দিতে পারে, গুমোটের শান্ত নদী মনকে তার উদাস করে দেয়, মৃদু বাতাসের ছোটবড় অফুরন্ত ঢেউয়ের তালে তালে দোল খেয়ে মনের আনন্দ সজাগ হয়ে ওঠে, তুফানের সময় উন্মাদিনী নদীর ভয়ঙ্কর মূর্তি দেখে দুরন্ত উল্লাস চেপে রাখাই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এই নদীকে দুটি বিদেশী শহুরে ছেলেমেয়ের ভাল লাগলে তার গর্ব হবে না?
আটখামারে হারু মাঝির নৌকার পাশে নৌকা ভিড়ান হল। হারু মাঝি সাগ্রহে অভ্যর্থনা করে বলল, ‘আয় নাগা, আয়।’ নানা কথা বলতে বলতে নাগার আঙ্গুলের আংটি দেখে হারু মাঝি বলল, ‘খাসা গিল্টি করছে তো, কত নিল?’
‘গিল্টি না পাকা, খাঁটি সোনা। ছোটকর্তা দিছে।’ আংটিটি হাতে নিয়ে হারু মাঝি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দ্যাখে আর চোখে মুখে লোভ আর হিংসার ছাপ দেখে নাগার মনটা খারাপ হয়ে যায়। তারপর সমস্ত বৃত্তান্ত শুনে হারু চমকে গেল।
‘তরে খেদাইয়া দিছে?’
‘ছোটকর্তা কি কয় দেখি।’
হারুমাঝি মুখ ভার করে রইল। কত আশা সে করেছিল নাগার কাছে, সব বুঝি ফস্কে গেল। তার কপালটাই নেহাত মন্দ।
‘পয়সা কড়ি পাস নাই কিছু?’
‘কয়টা টাকা চাইয়া আমারে দে। ছোট কর্তা তরে চাইলেই দিব।’
নাগা মাথা নেড়ে বলল, ‘তা পারুম না কাকা, বেতন যখন দেওনের কথা কর্তা নিজেই দিবো। কোন্ মুখে কমু আমারে টাকা দ্যান, আমার সরম নাই?’
হারু মাঝি গরম হয়ে বলল, ‘সরম? গরীব মানসের সরাম কিরে? খাওয়ান জোটে না, সরম?’