নৌকা ছিল তার অপর দিকে, ছোট একটি ডিঙ্গি নৌকায় গিয়ে উঠলেন। মাঝি দু’জন সঙ্গে সঙ্গে নৌকা ছেড়ে দিল। নৌকায় বসবার জায়গা বড় কম, যাদববাবু নিজে বসে কাছেই জায়গা দেখিয়ে বললেন, ‘বয় নাগা, তর লগে আলাপ করি।’
যাদববাবু তো খাতির করে তাকে কাছে বসান, নাগার মনে হয় মানুষটাকে সে ঠকাচ্ছে, বাড়িতে যে সব কাণ্ড হয়ে গেছে না জানিয়েই তাঁর স্নেহ গ্রহণ করা উচিত হচ্ছে না।
‘করমতলার বিত্তান্ত কই শোনেন কর্তা।’
‘বিত্তান্ত জানি নাগা, তার কওন লাগব না। দাদা তরে খেদাইয়া দিছে তো?’-যাদববাবু একটু হাসলেন।
নাগা আশ্চর্য হয়ে বলল, ‘আপনে জানলেন ক্যামনে?’
‘আমার ঘরের বিত্তান্ত আমি জানুম না?’ বলে যাদববাবু একটা মোটা চুরুট ধরিয়ে নাগার সমালোচনা আরম্ভ করলেন। নাগার কোন দোষ ছিল না, যাদববাবু মোটামুটি তাকে সমর্থনও করেন, তবে সে বুদ্ধির পরিচয় দিলে তিনি খুব খুশী হতেন। তেজ থাকা ভাল, কিন্তু সেই সঙ্গে একটু বুদ্ধি না থাকলে তেজটা গোয়ার্তুমি হয়ে দাঁড়ায় কিনা। আর মিছামিছি অন্যকে দিয়ে অপমান করিয়ে গোঁয়ার মানুষ তেজ দেখায় কিনা, তাই নাগার তেজের জন্য যাদববাবু খুশী হয়েছেন আর বোকামির জন্য হয়েছেন অখুশী।
‘বোকামি কর্তা?’
‘হ বোকামি। আগেই দাদারে চটানের তর কোন কাম ছিল শুনি? আগে ক’ ব্যাপার কি হইছে, ক্যান মারছস পরশারে, বিত্তান্ত শুইনা দাদা যদি অন্যায় কইরা তরে মন্দ কইত, তখন ফোঁস কইরা উঠলে তার দোষ ছিলো না।'
যাদববাবু আরও ভাল করে কথোটা তাকে বুঝিয়ে বলেন, নাগা চুপ করে শুনে যায়। গরীবের সর্বদা অপমানের ভয়, গরীব তেজস্বী হলে তাই তেজ নিয়ে বড় বাড়াবাড়ি করে, খিটখিটে মানুষের মত স্বভাব হয়ে যায়। ভাবে, বিনয় বুঝি কাপুরুষতা, বাচাল আর বদমেজাজী মানুষকে মিষ্টি কথায় ঠাণ্ডা রাখা বুঝি তোষামোদ করা।