পাতা:মাঝির ছেলে - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৩
মাঝির ছেলে

ট্র্যান্সপোর্ট কোম্পানিতে বড় চাকরি করেন। জোরে জোরে মাথা নেড়ে তিনি যাদববাবুকে জানিয়ে দিলেন, হয় না, এভাবে একটিমাত্র এত দামী লঞ্চ কিনে মানুষ ও মালের চলাচলে সাহায্য করে লাভ করতে পারে না! বড় কোম্পানি অনেকগুলি লঞ্চ আর স্টীমার নিয়ে পারে, বড় বড় কোম্পানির সঙ্গে তাদের কণ্টাক্ট হয়। বাড়তি ছোট ছোট কাজও তারা অনেক পায়,—আর পারে নৌকার মাঝি, নৌকার পিছনে যার খরচ খুব কম। অবশ্য বাণিজ্য জগতে ধীরে ধীরে চারিদিকে যোগাযোগ গড়ে উঠলৈ লঞ্চ থেকে আয়ও যাদববাবুর বাড়বে, কিন্তু কোনদিন খরচ উঠবে। কিনা সন্দেহ। এটা কাজের লঞ্চ নয়, শখের লঞ্চ।

 লৌহজঞ্জ ফিরে এসে সেখানে লঞ্চ রেখে যাদববাবু নৌকা ভাড়া করে বাড়ি গেলেন। নাগা লঞ্চেই থেকে গেল।)

 ভিমনার সঙ্গে নাগার ভাব হয়েছে, প্রায় নির্বাক মানুষের সঙ্গে যতেখানি ভাব হওয়া সম্ভব। প্রথম দিন মানুষটার চারিদিকে যে রহস্যময় আবরণ সম্বন্ধে নাগা সচেতন হয়ে উঠেছিল, ক’দিনের ঘনিষ্ঠতার পরেও সেটা ক্ষয় হয়ে যায় নি। ভিমনার বাড়ি কোথায়, তার আপনজন কে আছে, এতদিনে সে কি করেছে, কিছুই নাগা জানে না। জিজ্ঞাসা করলে’ ভিমন কিছু বলে না, শুধু একটু হাসে। অতীতের সঙ্গে সে যেন সমস্ত সম্পর্ক চুকিয়ে দিয়েছে, সহজ সাধারণ প্রশ্নের জুবাবেও অতীতের তুচ্ছ কথাটিও বলতে চায় না। অন্য সব প্রশ্নের সে কিন্তু জবাব দেয়।

 নাগা বলে, “আমি পারুম না জাহাজ চালানের কায়দা শিখতে?

 ভিমনা বলে, “ক্যান পারব না, খুব পারব।”

 নাগা বলে, “শিখাইবা?”

 ভিমনা বলে, “শিখামু। সময় লাগবো।”

 সময় লাগুক, তাতে নাগার আপত্তি নেই। সমস্ত জীবনটা তার সামনে পড়ে আছে।

 সন্ধ্যার সময় ভিমনা লঞ্চ থেকে নেমে কোথায় চলে যায়, ফিরে আসে অনেক রাত্রে। নাগা ভাবে, নেশাটেশা করে নাকি, লোকটা? কিন্তু