পাতা:মাঝির ছেলে - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মাঝির ছেলে
৫৪

নেশা করার কোন লক্ষণ দেখা যায় না। জিজ্ঞাসা করলে ভিমনা বলে, “লোকজনের লগে দেখা করলাম।”

 ‘কে লোকজন?”

 পরিচিত লোকজন, আবার কে। লঞ্চে চুপচাপ বসে থাকার বদলে (তাদের সঙ্গে আডডা দিয়ে সময় কাটিয়ে এসেছে। ভিমনার কথাবার্তা চালচলন নাগার কাছে তাকে আরও রহস্যময় করে তোলে। মানুষটাকে সে একেবারেই বুঝতে পারে না।

 ভিমনার কাছেও লোক আসে দু’একজন। তাদের সঙ্গে ভিমনা আড়ালে কথা কয়। তৃতীয় দিন সকালে পাঞ্জাবি গায়ে গুণ্ডার মত চেহারার একজন ভদ্রলোক এসে আধঘণ্টা কথা বলে মেজাজ গরম কেলরে চলে গেলেন। নামবার আগে বললেন, “আসবি না, ক্যামন? এই তর শেষ কথা?”

 ভিমনা জবাব দিল, “শেষ কথা। আপনে বড় অসাবধান।”

 কে জানে এসব কথার অর্থ কি? নাগার বড় কৌতুহল হয়, কিন্তু জিজ্ঞাসা করলে ভিমনা কিছু বলবে না জেনে সে চুপ করে থাকে।.

 পরদিন সন্ধ্যার সময় ভিমন যখন নেমে যাচ্ছে, একজন ফিরিঙ্গি সাহেব আর একজন চীনা ম্যান তার সঙ্গে দেখা করতে এল। নাগার বিস্ময়ের আর সীমা রইল না। এসব লোকের সঙ্গেও ভিমনার ঘনিষ্ঠতা আছে। অনেকক্ষণ তিনজনে গুজগাজ ফিসফাস করে কাটিয়ে দিল, তারপর আগন্তুক দু’জন অমায়িক হাসি হেসে ভিমনার কাছে বিদায় নিয়ে চলে গেল।

 কৌতুহল দমন করতে না পেরে নাগা জিজ্ঞাসা করল, “ওনারা কেড’

 ভিমনা উদাসভাবে জবাব দিল, ‘কোড জানে, চোর ডাকাত হইবে।” পরদিন যাদববাবু এলেন, সকালের স্টীমারে। তীরে দাড়িয়ে খানিকক্ষণ বিষন্ন উৎসুক দৃষ্টিতে জলকন্যাকে দেখলেন, তারপর ওপরে এসেই ডাকলেন, ভিমনাকে।

 “লঞ্চ ফিরাইয়া দিমু, ভিমনা।'

 ফিরাইয়া দিবেন? খাস লঞ্চ কর্তা-কী ইস্পিড,