পাতা:মাঝির ছেলে - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মাঝির ছেলে
৬৬

 নাগা ধীরে ধীরে ভিমনার কাছে গিয়ে দাড়াল। তার অনেকগুলি প্রশ্ন আছে।

 প্রথম প্রশ্নের জবাব শুনেই নাগা থ” বনে গেল। প্রায় ত্রিশ হাজার টাকা! ওই সামান্য কয়েকটি জিনিসের দাম প্রায় ত্রিশ হাজার টাকা।

 ‘ভিতরে কি আছে?”

 “সিল্ক আছে আর—আরও কত কি আছে। আমার ঠিক জানা নাই।'

 নাগা একটু ভাবল। “লোকগুলি কে? যাইবো কই?”

 লোকগুলি খুব সম্ভব চোর, ডাকাত, খুনী অথবা রাজনৈতিক অপরাধী, বসবাস করার জন্য এদেশে পালিয়ে এসেছে। এমনি তো দেশে ঢুকতে পেত না, তাই অনেক টাকা দিয়ে এভাবে চুপি চুপি ঢুকছে। কে কোথায় যাবে কে জানে, বড় বড় শহরে গিয়ে ভিড়ের মধ্যে মিশে যাবে।

 নাগা ক্রমাগত প্রশ্ন করে চলে, ভিমনাও ধৈর্য ধরে জবাব দিয়ে যায় মনে হয়, জবাব দিতে যেন ভালই লাগছে ভিমনার। ঘুমে নাগার চোখ জড়িয়ে আসে বলে জবাবগুলি তার বড় গোলমেলে মনে হতে থাকে। শুয়ে শুয়ে সমস্ত ব্যাপারটা ভাল করে বুঝবার চেষ্টা করবে ভেবে প্রশ্ন করা স্থগিত রেখে গিয়ে শোয়ামাত্র সে ঘুমিয়ে পড়ে। শেষ রাত্রে বন্দরে ডেনিস ও তার তিনজন সঙ্গীকে নামিয়ে দিয়ে জলকন্যা যখন আবার যাত্রা শুরু করে তখন সে অচেতন হয়ে ঘুমোচ্ছে।

 ঘুম ভাঙ্গার পর পুলিশের কথা মনে পড়ায় তার কৌতুহলটা চাপা পড়ে যায়। কিন্তু মোহনা থেকে লঞ্চ নদীতে প্রবেশ করে, গ্রাম শহর আর স্টীমার ঘাট অতিক্রম করে চলতে থাকে, রাত্রির অন্ধকারে পূর্ববঙ্গের সবচেয়ে বড় শহরে সেই চীনাম্যানটির গুদামে বেআইনী মাল আর বাড়ীতে বেআইনী মানুষগুলি চালান হয়ে যায়, পুলিশ একটু সন্দেহের দৃষ্টিতেও লঞ্চের দিকে তাকায় না। করমতলার জমিদার তার শখের জলকন্যায় বেড়াতে ‘বেরিয়েছেন তাকে সন্দেহ করবার কি আছে?