পাতা:মাঝির ছেলে - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সাত

যাদববাবু বললে, “তারপর কি ভিমনা?”

 ভিমনা জবাব দিলে, “তারপর কত কি আছে কর্তা, ভাবেন ক্যান? তলে তলে কত ব্যবসা ঢলে তার কি হিসাব আছে!”

 কথা যে তার মিথ্যা নয়। ধীরে ধীরে তার প্রমাণ পাওয়া যেতে লাগিল। ভিমনার মারফত এর কাছ থেকে ওর কাছ থেকে আসতে লাগল। ভিমনার ছোট বড় নানা রকম কাজের চুক্তিতে জলকন্যা যাতায় ৩ করতে লাগল। এখান থেকে ওখানে আর পয়সা আসতে লাগল হুহু করে। মাসখানেকের মধ্যে ডেনিসের কাছ থেকে আরেকবার ডাক এল। চাঁদপুর থেকে ছোট বড় কয়েকবাক্স কমললেবু নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় নিলি করতে হবে। খান দশেক অর্ধেক ছেড়া পাঁচ টাকার নোট ডেনিস যাদববাবুর হাতে দিল, এক এক জায়গায় একখানা নোটের বাকী অর্ধেক দেখিয়ে লোকে কমলালেবুর বাক্স ডেলিভারি নেবে। প্রত্যেকটি বাক্সে নম্বর দেওয়া ছিল। জায়গার নাম, লোকের নাম এবং কে কত নম্বর বাক্স নেবে তার একটি লিস্টও ডেনিস যাদববাবুকে দিল।

 ঘুরে ঘুরে সবগুলি বাক্সের ডেলিভারি দিতে সময় লাগল প্রায় দু'দিন। শেষদিন শেষ নামটি দেবার সময় বাইরে থেকে বেশ বোঝা গেল যে ভিতরে কমলালেবুগুলি একটু খারাপ হয়ে গেছে। বাক্সগুলির মধ্যে সত্যসত্যই কমলালেবু ছিল, তবে প্রত্যেক বাক্সের ভিতরে মাঝখানের কতকগুলি লেবুর মধ্যে গোঁজা ছিল কোকেন ভরা ছোট ছোট লোহার টিউব।

 এমনিভাবে নানা দিক দিয়ে টাকা আসতে লাগল। কিন্তু যাদববাবুর সুখী হওয়ার লক্ষণ দেখা গেল না। কমললেবু বিলি করার পর তিনি বললেন, “ভাল লাগে না নাগা। কি বিশ্রী কাম।”

 নাগা চুপ করে রইল। টাকার জন্যেই যাদববাবু লঞ্চটিকে এসব কাজে? ব্যবহার করছেন বটে। কিন্তু নাগা জানে ঐথমবার সমুদ্রের মধ্যে এগিয়ে গিয়ে সমুদ্রগামী জাহাজ থেকে মাল আনার বদলে যদি কোকেন বিলি