পাতা:মাঝির ছেলে - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মাঝির ছেলে
৬৮

করার কাজের প্রস্তাব আসত, আরও দশগুণ বেশী টাকা দিলেও যাদববাবু রাজী হতেন না। দুঃসাহসিক জীবন যাপনের উত্তেজনা কেটে যাওয়ার পর এসব কাজের নোংরা দিকটা যতই স্পষ্ট হয়ে উঠছে ততই তার বিতৃষ্ণা বেড়ে যাচ্ছে।

 একদিন রাত প্রায় এগারটার সময় সদরের ঘাটে লঞ্চ সবে নোঙর ফেলেছে, হন্তদন্ত হয়ে নিতাই সাহা এসে হাজির। সিদ্ধি-পাতা চালান দেওয়ার ব্যাপারে পুলিস অনেক চেষ্টা করেও নিতাই সাহাকে জড়াতে পারে নি। সে বসে থাকে। তার গদিতে, গুদামে হরদম মাল আসছে যাচ্ছে। সে কি প্রত্যেকটা মাল খুলে খুলে দেখতে যাবে কোনটার মধ্যে সিদ্ধিপাত লুকানো আছে। চালানপত্র দেখাশোনার ভার যে কৰ্মচারীর হাতে সে কিছু জানলেও জানতে পারে। এ ব্যাপারে সে কিছুই জানে না। কর্মচারীটিই স্বীকার করেছে কুবুদ্ধিটা একমাত্র তার, মনিবকে না জানিয়ে সেই ফাকতালে কিছু রোজগারের চেষ্টা করছিল। এটা কর্মচারীটির উদারতা নয়, জরিমানা হলে নিতাই সাহা দেবে, আর সিদ্ধিপাত চালান দেবার জন্য নেহাত যদি জেল হয় কিছুদিনের, চাকরিটা তো বজায় থাকবে নিতাই সাহার কাছে।

 এমন অসময়ে নিতাই সাহার আবির্ভাবে যাদববাবু একটু আশ্চর্য হয়ে বললেন, ‘ব্যাপার কি সা” মশায়?”

 নিতাই সাহার বক্তব্য শুনে তিনি খানিকক্ষণ চুপ করে রইলেন, তারপর একটু ঝাজালো সুরেই বললেন, “আমার এই শখের লঞ্চ আপনার কোন কামে লাগিব সা” মশায়?”

 নিতাই সাহা কাতর হয়ে বলল, “আমারে বাঁচান যাদববাবু।”

 ভিমনাকে দেখিয়ে যাদববাবু বললেন, “ওর লগে কথা কন”—বলে কেবিনে চলে গেলেন।

 পাঁচ মিনিটের মধ্যে কথাবার্তা শেষ করে যাদববাবুর অনুমতি নিয়ে এসে ভিমনা নোঙর তুলবোর হুকুম দিল। অল্পক্ষণের মধ্যে “জলকন্যা” উজান ঠেলে চলতে আরম্ভ করল, যত জোরে চলা সম্ভব। তবু ভিমনার কাছে দাড়িয়ে হাত কচলাতে কচলাতে নিতাই সাহা বার বার বলতে