পাতা:মাঝির ছেলে - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭১
মাঝির ছেলে

কোনদিন যে ফিরে পাবে সে ভরসাও আর নেই! নাগার মাথা ঘুরে যায়। কি করে মরল রামলক্ষ্মণ? কি করে মরল—কণিকা তার কি জানে, এত সে যত্ন করছিল বেজী দুটোকে, কতরকম খাবার খেতে দিচ্ছিল, তবু ব্যাটারা মরে গেল। ফিরিয়ে দেবার জন্য কাকার চিঠি পাওয়ার পর দেব দেব করে কয়েকদিন দেরি করে ফেলেছিল কণিকা, তারপর একদিন সকালে উঠে দ্যাখে কি, রামলক্ষ্মণ দুজনেই মরে কাঠ হয়ে পড়ে আছে। —‘আমারে কিন্তু একটা বেজী ধরে দিতে হবে নাগা।’

 ‘তোমারে কচুপোড়া ধইরা দিমু। রামলক্ষ্মণরে মারলা তুমি, তোমার মুখ দেখলে পাপ হয়।’

 ‘কি বললি তুষ্ট, বজাত হারামজাদা।’

 বাড়ীতে পা দিয়েই কণিকার সঙ্গে আবার কলহ হয়ে গেল। কিন্তু সেজন্য নাগার মনে আর দুঃখ নেই; এসব শহুরে মেয়েকে দূর থেকে নরস্কার করাই ভাল। সমস্ত সকালটা নাগা গুম খেয়ে রইল। নকুল মাঝির বাড়ী যাওয়ায় ইচ্ছা হচ্ছিল বটে, কিন্তু গিয়ে রূপাকে মুখ দেখাবে কি করে? রূপাকে সে কথা দিয়েছিল রামলক্ষ্মণকে ফিরিয়ে এনে দেবে।

 দুপুরবেলা নাগা বাড়ী থেকে বেরিয়ে গেল। বাগ্‌দী পাড়ায় গিয়ে ঘরে ঘরে জিজ্ঞাসা করল, বেজী আছে গো, বেজী? না, কারো ঘরেই বেজী নেই। বেশ, আজ নেই তো নেই, কাল সকালে থাকবে কি, একটা বেঁজীর জন্য একটাকা দাম দিলে? অনেকগুলি ছেলেবুড়োকে বেঁজী ধরবার চেষ্টায় উৎসাহী করে নাগা বাড়ী ফিরে এল, তিনটি ফাঁদ বানিয়ে সন্ধ্যার সময় পেতে এল বাঁশবনে।

 কণিকা দেখে খুশী হয়ে ভাবল, হুঁ, আমার কথা না শুনে ’যাবে কোথায়! কিন্তু নাগা নাকি তার ওপর চোটপাট করেছিল। তাই মনে মনে খুশী হলেও নাগার সঙ্গে যেচে কথা বলবার কোন চেষ্টাই সে করল না। ভাব যদি করতে চায় নাগাই এসে ভাব করুক, তার কিসের দায় পড়েছে চাকরের সঙ্গে যেতে ভাব করতে।

 সকালে দেখা গেল একটি ফাঁদে একটি বাচ্ছা বেজী ধরা পড়েছে। নাগার মনটা খারাপ হয়ে গেল। বাচ্ছা বেজী দিয়ে সে কি করবে, রূপা