পাতা:মাঝির ছেলে - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৭
মাঝির ছেলে

যাদববাবু যদি নদী আর সমুদ্রে ঘুরে বেড়াতে পারেন, সে পারবে না কেন?

 মাঝরাত্রিতে সেদিন ঘণ্টাখানেকের জন্য প্রবল ঝড় বৃষ্টি হয়ে গেল। বাতাসের শো শো শব্দ আর বৃষ্টির ঝাপটায় ঘুম ভেঙ্গে নাগা উঠে গিয়ে জানালাটা বন্ধ করে দিল। বিছানায় এসে কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে শুয়ে পড়ল না, দু’হাত দিয়ে হাঁটু জড়িয়ে ধরে বসে ভাবতে লাগল স্বপ্নের কথা। নাগা স্বপ্ন দেখছিল, রূপার সঙ্গে মহা সমারোহে তার বিয়ে হচ্ছে, বড়লোকের বিয়েতে যেমন বাজনা বাজে আর হৈ-চৈ হয়, সেইরূপ বাজনা আর হৈ-চৈএর সঙ্গে। পরদিন সকালে নকুল যখন এ বাড়ীতে এসেছে, রূপাকে প্রশ্ন করে কথাটা পরিষ্কার করে নিতে নাগা তার বাড়ীতে গেল।

 “আমি যেখানে খুশী যাইতে পারুম তো?

  “ক্যান পারব না?”

 “যদি সমুদ্দুরে যাই?

 ‘যাইও।’

 “কাঁদা কুটা করবা না?”

 “কাঁদা কাটা করুম ক্যান?”

 আরও অনেক প্রশ্নের জবাব দিয়ে রূপা ঠোঁট উল্টে বলল, “এত কথা জিগাও ক্যান? তুমি বুঝি ভোব তোমারে না দেইখা আমি বাঁচুম না?” তারপর ভেবে চিন্তে আবার বলল, “কাঁঠাল রইছে গাছে, উনি গোফে তেল দিতে বসছেন।”

 খোঁচা খেয়েও নাগা কিন্তু হাসি মুখে জোরে জোরে পা ফেলে বাড়ীর দিকে চলতে আরম্ভ করল। আর ভাবনা কি, সমুদ্র বা রূপা কাউকেই আর ত্যাগ করতে হবে না। এখন নকুলের কাছে কথাটা পাড়লেই হয়। নিজের বিয়ের কথা নিজে বলা অবশ্য একটু কেমন কেমন দেখায়, হারু মাঝি বা অন্য কোন আত্মীয়-স্বজন বন্ধুবান্ধবের মারফত নকুলের কাছে প্রস্তাবটা গেলেই ভাল হ’ত, কিন্তু কাল ভোরে সে গ্রাম ছেড়ে চলে যাবে, এখন হারু মাঝিকেই বা পায় কোথায়, আত্মীয় বন্ধু কাকেই বা রাজী করায় ঘটকালি করতে? তাছাড়া নাগা ধৈর্যও ধরতে পারছিল না।