পাতা:মাঝির ছেলে - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মাঝির ছেলে
৭৮

 মাঝপথে নকুলের সঙ্গে দেখা হতে সে তাকে পথের পাশে পুকুরপাড়ে একটা গাছতলায় ডেকে নিয়ে গেল।

 “একটা কথা কামু মামু।”

 “কও।”

 এতক্ষণ উত্তেজিত কল্পনায় নকুল মাঝিকে প্রস্তাবটা জানিয়ে দেওয়া খুব সহজ মনে হয়েছিল, এখন কোথা থেকে লজ্জা আর অস্বস্তি এসে যে নাগাকে কাবু করে ফেলল। নকুল এক চোখের দৃষ্টিতে তাকে দেখছিল, মাটির দিকে চেয়ে জড়িয়ে জড়িয়ে কোন রকমে কথাটা বলে ফেলে, নাগা, ঘাড় নীচু করেই দাড়িয়ে রইল। নকুলের মাথা নাড়াটা সে দেখতেই পেল না।

 “রূপারে বিয়া করব? তা হয় না বাপু। রূপার বিয়া ঠিক করছি।”

 নাগা তৎক্ষণাৎ মুখ তুলল।—“ঠিক করছ? কার লগে?

 ‘আছে, আছে, পাত্র ঠিক আছে।”

 “আমাগো, পরশা?”

 ‘জানি যদি তবে জিগাও ক্যান?”

 নাগা ব্যাকুল হয়ে বলল, ‘পরশার লাগে বিয়া দিব। কি মামু, পরশা যে লোক ভাল না?”

 নকুল বলল, “তর থেইক ভাল। পরশ একশ টাকা পণ দিবা কইছে।”

 নাগা তীব্র চাপা গলায় বলল, “পণের লাইগা মাইয়ারে বলি দিবা?”

 ‘লম্বা লম্বা কথা কইস না। নাগা, মুখের আটক না থাকে খিল বানাইয়া ল” -বলে রাগে আগুন হয়ে নকুল চলে গেল। নাগা সেই পুকুরপাড়ের গাছতলায় দাড়িয়ে ভাবতে লাগল, এ ব্যাপারটা হল কেমন? সমুদ্র ছাড়া তার তো শেষ পর্যন্ত আর কিছুই রইল না।

 বাড়ী ফিরেও নাগা যতক্ষণ পারে আমবাগানে গাছের ছায়ায় শুয়ে বসে কাটিয়ে দিল। বিকালের দিকে মন ঠিক করে সে নকুলের কাছে যাবার জন্য বেরিয়ে পড়ল। পরেশ টাকা কোথায় পাবে ভগবান জানেন, কিন্তু সে যদি সত্যিই একশ’ টাকা পণ দেবে বলে থাকে, নাগাও কি একশ’ টাকা পণ দিতে জানে না? টাকাটা সে কোথায় পাবে ভগবান জানেন, কিন্তু যে ভাবেই হোক টাকা সে যোগাড় করবেই।