পাতা:মাঝির ছেলে - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৯
মাঝির ছেলে

 নকুলের বাড়ীর উঠানে পা দিয়ে নাগা থমকে দাড়িয়ে পড়ল। দাওয়ায় বসে নকুল, রূপার মা আর রূপার সঙ্গে কথা বলছে পঞ্চ। নকুলের সেই পালানো ছেলে, কিছুদিন আগে যাকে সে সদরের জেঠির ধারে বসে রুমাল —নাড়তে দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিল।


নয়

কতকালের ঘর-পালানো ছেলে ঘরে ফিরেছে, তাকে নিমেই সকলে ব্যস্ত, তখন তো আর বিয়ের কথা তোলা যায় না। ছেলে বেঁচে আছে বললে পর্যন্ত রাগ করে, এতকাল নকুল যে ছেলের ওপর বিরাগ দেখিয়ে এসেছে, ছেলেকে দেখেই নকুল যেন সব ভুলে গিয়েছিল! ছেলে যে চোখটা কাণা করেনি। সেই চোখে মুগ্ধ দৃষ্টিতে সে ছেলের দিকে তাকিয়ে छिल, उद्धि कुँ ঋকরে শুনছিল তার কথা।

 আলোচনাটা নাগাকে তাই স্থগিত রাখতে হয়েছে। তবে বিশেষ ভাবুন তারু হয় নি, কদিন পরেই তো সে ফিরে আসবে।

 এবার যাতায়াতে হিসাবের চেয়ে সময় লাগল অনেক বেশী। তাড়াহুড়া করার কিছু ছিল না, জলকন্যা তাই অনেকটা মন্থরগতিতে উত্তরদিকে যাত্রা আরম্ভ করেছিল। নদীর বৈচিত্র্য তো ছিলই, তার ওপরে ছিল বর্ষার সূচনার বৈচিত্র্য। গুমোট করে আকাশের এক প্রান্ত থেকে মেঘ আঁকাশ ছেয়ে ফেলতে ফেলতে জোর বাতাস উঠে মেঘ উড়িয়ে নিয়ে গেল, সকাল থেকে শুরু করে সারাদিন মুষলধারে বর্ষণের পর বৃষ্টি থেমে গিয়ে সারারাত আকাশে চলল। চাঁদ আর টুকরো টুকরো মেঘের আশ্চর্য খেলা। নাগা প্রায় রূপার কথা ভুলে গেল আর যাদববাবু প্রায় ভুলে গেলেন তার জলকন্যা বেআইনী মাল ব্যয়ে চলেছে।

 নিতাই সাহা হিসাবী লোক, ফিরবার সময় জলকন্যা যাতে তার একটা 'আইনসঙ্গত চালান নিয়ে আসে তার ব্যবস্থা, সে করে রেখেছিল। মালের প্রত্যাশাতেই জলকন্যাকে তিনদিন নোঙর ফেলে বসে থাকতে হল, তারপর এক রাশি বস্তা বোঝাই নিয়ে ফিরবার পথে জলকন্যার গতি আপনা