পাতা:মাঝির ছেলে - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মাঝির ছেলে
৮২

দু'এক দিনের মধ্যে লঞ্চ যদি করমতলায় ফিরে যায় সে যাতে লঞ্চে যেতে পারে সেজন্য নাগা যেন যাদববাবুকে বলে অনুমতি নিয়ে রাখে।

 ‘গরীব মাইনষের বার বার পয়সা দিয়া যাওন-আসন পোষায় না নাগা।'

 তাড়াতাড়ি করমতলায় ফিরে যাবার জন্য নাগার মন ছটফট করছিল এখান থেকে লঞ্চ যদি করমতলায় ফিরেও যায়, মাল খালাস দিয়ে পরশুর আগে যেতে পারবে না। অন্য কাজে যদি আটকে যায়, তা হ’লে করমতলায় ফিরতে আরও কতদিন লাগবে কে জানো! যাদববাবুর ফাছে ছুটি নিয়ে ওবেলা সাতখামারের জাহাজে গেলে হয় না?

 যাদববাবু বললেন, “বাড়ীতে যাবি? সে” আমিও যাই-বইসা বইসা ছাল নামান দেইখা করুম কি?”

 করমতল পৌছিতে রাত হয়ে গেল। রূপা কি এখন জেগে আছে? বাড়ীর কেউ কি জেগে আছে? কি করে এখন একবার রূপাকে দেখে আসা যায়? চলতে চলতে একটা কথা নাগার মনে পড়ে গেল। পথের মোড়ে পৌছে ‘আসতেছি কর্তা” বলে সে নকুলের বাড়ীর রাস্তা ধরল॥

 নকুল সবে দরজা বন্ধ করেছিল, নাগার ডাক শুনে বেরিয়ে এল।

 “কিরে নাগা?”

 “পঞ্চুর লগে দেখা হইছিল।”

 “কি কইছে পঞ্চু?”

 নাগা হাঁ করে দরজার দিকে তাকিয়ে ছিল। রূপা কি ঘুমিয়ে পড়েছে? রূপা জেগে থাকলেও তার সঙ্গে চুপিচুপি দু’চারটা দরকারী কথা বলার সুযোগ যে আজ জুটবে না। তাতে কোন সন্দেহ নেই। তবু রূপাকে অন্ততঃ একবার না দেখে ফিরে গেলে চলবে কেন?: রূপার ওপর নাগার রাগ হতে থাকে। সন্ধ্যা হতে না হতে এমন নিশ্চিন্ত মনে ঘুম। আর তার এদিকে ভাবনায় চিন্তায় মাথা খারাপ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। রূপা কি—”।

 “আঁ? পঞ্চ কি কইছে? কইছে আজ কাইলের মধ্যে আসবো।”

 “পঞ্চর দোকান দেখছস নাগা?”