পাতা:মাঝির ছেলে - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মাঝির ছেলে
৮৬

পারে, তবে এখনো কিছু ঠিক নেই। লঞ্চে পঞ্চও এসেছে। তার সম্বন্ধে ভিমনা একটু গম্ভীর ভাবেই মত প্রকাশ করল—“গায়ে পইড়া খাতির জমাইতে চায়, কেমন যান সনদ লাগে ছোকরারে।”

 যাদববাবু হেসে বললেন, “আমাগো নকুইলার পোলা। জন্মাবধি দেইখা আসতেছি।”

 একটি দু’টি করে ভোঁতা। দিনগুলি কাটতে লাগল। দু’টি একটি ছোট ছোট কাজের আহবান এল কিন্তু যাদববাবু সেগুলি বাতিল করে দিলেন। নাগার মনমরা ভাব দেখে সকলেই অবাক হয়ে ভোবল, ছেলেটার হল কি? ছোটমা কয়েকবার তাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন, তার অসুখ করেছে কিনা। একদিন জোর করে ধমক দিয়ে তাকে তিনি খানিকটা পাচন গিলিয়ে দিলেন। নিজে থেকে নাগা কিছুতেই ভাব করতে আসছে না। দেখে কণিকা অগত্যা দু’একবার তার সঙ্গে ভাব করতে গেল। কিন্তু একেবারেই আমল পেল না। খোকার গ্রীষ্মের ছুটি আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল, একদিন সকালে গুরুজনকে প্রণাম করে সে কলকাতায় বিদ্যা অর্জন করতে চলে গেল।

 একদিন সকালে এল নিতাই সাহা। পরেশ তখন দু’দিনের ছুটি নিয়ে বাড়ী যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। এ ক’দিনে পরেশের উপর নাগার বিরাগ অনেকটা কমে গিয়েছিল। কদিন পরেই তার এত সাধের বিয়ে কিন্তু নাগার মতই তার যেন আনন্দ নেই, উৎসাহ নেই। তার মুখখানাও সর্বদা শুকনো দেখায়, কেমন একটা ভীরু স্তিমিত দৃষ্টিতে সে মানুষের দিকে তাকায়। নাগা কিছু বুঝতে পারে না বটে। কিন্তু পরেশের ওপর মনটা তার নরম হয়ে আসে। এরকম মানুষের ওপর কি রাগ পুষে রাখা যায়?

 নিতাই সাহা চৌকীতে পা তুলে জাকিয়ে বসল। আজ তার মুখের ভাব অন্যদিনের চেয়ে বেশী ভারিকি। ভাল করে বসে সে বলল, ‘ম-ঠাকরুণগোর গয়না পত্তর কিছু চুরি গেছে নাকি যাদববাবু?”

 যাদববাবু আশ্চর্য হয়ে বলেন, “কই না?”

 জবাব শুনে নিতাই যেন আরও বেশী আশ্চর্য হয়ে গেল। চুরি যায় নাই? হারায় নি কিছু?