পাতা:মাধবীকঙ্কণ - রমেশচন্দ্র দত্ত.pdf/৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কাষ্ঠ জ্বলিতেছে, তাহার আলোক সেই গহ্বরের শিলার চারিদিকে প্রতিহত হইতেছে। অগ্নির পার্শ্বে কয়েকখানি হস্তলিপি, একখানি শোণিতাক্ত খড়্গ ও স্থানে স্থানে প্রস্তরখণ্ড শোণিতে রঞ্জিত হইয়াছে। দূরগত-জল-স্রোতের ন্যায় একটি শব্দ সেই গহ্বরে শ্রুত হইতেছিল।

 গোস্বামীর আকৃতি অপূর্ব। ঈষৎ শ্বেত শ্মশ্রু বক্ষঃস্থল পর্যন্ত লম্বিত রহিয়াছে, কেশের জটাভার পৃষ্ঠে দুলিতেছে, শরীর অতিশয় দীর্ঘ, অতিশয় বলিষ্ঠ, অতিশয় তেজোময় বলিয়া অনুভব হয়। নয়নদ্বয় সেই অগ্নির আলোকে ধক্-ধক্ করিয়া জ্বলিতেছে। উন্নত ললাটে অধচন্দ্রাকৃতি চন্দনরেখা শোভা পাইতেছে।

 গাস্বামী জ্বলন্ত কাষ্ঠ নির্বাণ করিলেন পরে তাহার অপর পার্শ্বে যাইয়া সেই রক্তাক্ত খড়্গ হস্তে তুলিয়া লইলেন। বিকিরণ অগ্নিকণাতে তাঁহার মুখমণ্ডল ও দীর্ঘ অবয়ব আরও বিকট বোধ হইল, নরেন্দ্রনাথের হৃদয় স্তম্ভিত হইল। তিনি অগত্যা এক পদ পশ্চাতে যাইয়া শিলারাশিতে পৃষ্ঠ দিয়া দাঁড়াইলেন, অগত্যা তিনি কোষ হইতে অসি বাহির করিলেন। সাহসে ভর করিয়া তিনি স্থির হইয়া দাঁড়াইলেন, কিন্তু তাহার হৃৎকম্প একেবারে অবসান হইল না।

 অতি গম্ভীরস্বরে গোস্বামী ডাকিলেন, “নরেন্দ্রনাথ!”

 নরেন্দ্রনাথ এতক্ষণে বুঝিলেন, শৈব সেই উদয়পুরের যোদ্ধা—শৈলেশ্বর!

তেইশ

 শৈলেশ্বর। নরেন্দ্রনাথ! ভগবান একলিঙ্গের মন্দিরের গোস্বামীগণ যোগবলে মানব-হৃদয় জানিতে পারেন। নবেন্দ্রনাথ! তুমি পাপ-হৃদয়ে এ পবিত্র মন্দিরে প্রবেশ করিয়াছ। তোমার মনে পাপচিন্তা আছে।

 নরেন্দ্র। আপনি কে জানি না, আপনার কথার উত্তর দিতে বাধ্য নহি।

 শৈলেশ্বর। আমি ভগবান একলিঙ্গের মন্দিরের গোস্বামী, মন্দির-কলুষিতকারীকে প্রশ্ন করিবার আমার অধিকার আছে।

 নরেন্দ্র। আপনি আমাকে কিরূপে চিনিলেন, জানি না। আপনি আমার কি পাপ দেখিয়াছেন, জানি না।

 শৈলেশ্বর। এ মন্দিরে প্রতারণা অনাবশ্যক। একটা রমণীর প্রেমে মুগ্ধ হইয়া সেই নারীকে পুনরায় পাইবার লালসায় তুমি এই স্থানে আসিয়াছ।

 নরেন্দ্র। যদি তাহাই হয়, তাহাতে পাপ কি? গোস্বামীগণ যদিও রমণীপ্রেমে

৬৫

 মাধবীকঙ্কণ-৫