পাতা:মাধবীকঙ্কণ - রমেশচন্দ্র দত্ত.pdf/৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

এখনও দেখা যাইতেছে প্রত্যুষের শীতল বায়ু সেই পর্বতশ্রেণী ও শিবমন্দিরের উপর বহিয়া যাইতেছে ও নবজাত পুষ্পপরিমল বহিয়া নিদ্রোত্থিত জগৎকে আমোদিত করিতেছে। দুই-একটি নিকুঞ্জবন হইতে দুই-একটি পক্ষী সুন্দর গীত করিতেছে।

ছাব্বিশ

 উপরি-উক্ত ঘটনার কিছু পর যোধপুরাধিপতি রাজা যশোবন্তসিংহ পুনরায় সৈন্য সামন্ত লইয়া আওরংজীবের বিরুদ্ধাচরণ-করনাভিলাষে আগ্রাভিমুখে যাত্রা করিলেন। নরেন্দ্রনাথও সেই সৈন্যের সহিত রাজস্থান ত্যাগ করিলেন। যে কয়েক মাস নরেন্দ্রনাথ উদয়পুরে ছিলেন, তাহার মধ্যে আগ্রায় একটি রাজবিপ্লব ঘটিয়াছিল। আগ্রায় এক্ষণে সে সম্রাট নাই, সে রাজত্ব নাই। সে বিপ্লবের কথা সংক্ষেপে বলা আবশ্যক, ইতিহাসজ্ঞ পাঠক ইচ্ছা করিলে এ পরিচ্ছেদ ছাড়িয়া যাইতে পারেন।

 এই ভীষণ ভ্রাতৃযুদ্ধ আরম্ভ হওয়া অবধি প্রথমে বারাণসীতে সুলতান সুজা ও তৎপরে উজ্জয়িনীতে যশোবন্তুসিংহ পরাস্ত হইয়াছিলেন, তাহা পূর্বে বিবৃত হইয়াছে। এই শেষ ঘটনার বিষয় শুনিয়া সম্রাট শাজাহানের জ্যেষ্ঠপুত্র দারা যৎপরোনান্তি ক্রুদ্ধ হইয়া এক লক্ষের অধিক সেনা লইয়া স্বয়ং যুদ্ধযাত্রা করিলেন ও চম্বল নদীতীরে শিবির-স্থাপন করিয়া মোরাদ ও আওরংজীবের আগমন প্রতীক্ষা করিতে লাগিলেন। অচিরাৎ তাঁহারা ঐ নদীর অপর পার্শ্বে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। মোরাদ যেরূপ সাহসী, সেইরূপ যুদ্ধ কৌশলেও বিজ্ঞ তিনি নদী পার হইয়া সংগ্রাম করিবার পরামর্শ দিলেন। কিন্তু কৌশলপটু আওরংজীব তাহা না করিয়া দারাকে ভুলাইবার জন্য শিবির সেইস্থানে ত্যাগ করিয়া গোপনে সৈন্যসুদ্ধ নদীর অপর একস্থানে পার হইলেন ও আগ্রা হইতে চার ক্রোশ দূরে যমুনাতীরে শ্যামনগর নামক গ্রামে শিবির সন্নিবেশিত করিলেন। শত্রু চম্বল পার হইয়াছে ও আগ্রার নিকট যমুনাতীরে শিবির সংস্থাপন করিয়াছে শুনিয়া দারা একেবারে বিস্ময়াপন্ন হইলেন, তিনি তৎক্ষণাৎ আপন সৈন্য লইয়া গ্রামের নিকট যমুনাতীরে আপন শিবির সন্নিবেশিত করিলেন।

 শ্যামনগরের যুদ্ধের ফল ভারতবর্ষের সিংহাসন। উভয় পক্ষই এই যুদ্ধে লিপ্ত হইতে সংকুচিত হইলেন, চারি দিবসকাল উভয় সৈন্য উভয়ের সম্মুখীন হইয়া রহিল, পঞ্চম দিবসে যুদ্ধ আরম্ভ হইল। সে যুদ্ধের বর্ণনায় আমাদিগের আবশ্যক নাই। দারার বামপার্শ্বে রাজপুতরাজা রামসিংহ ও চত্বরশাল বীরোচিত বিক্রম প্রকাশ করিয়া নিহত হইলে, দারার দক্ষিণ দিকে কালীউল্লা নামক মুসলমান সেনাপতি বিদ্রোহী

৭৬