পাতা:মানসী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/২৪৬

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
২৪৪
মৌন ভাষা

তবে থাক্। ওই শোনো, অন্ধকারে শোনা যায়
জলের কল্লোলস্বর পল্লবের মরমর—
বাতাসের দীর্ঘশ্বাস শুনিয়া শিহরে কায়।
আরো উর্ধ্বে দেখো চেয়ে অনন্ত আকাশ ছেয়ে
কোটি কোটি মৌন দৃষ্টি তারকায় তারকায়;
প্রাণপণ দীপ্ত ভাষা জ্বলিয়া ফুটিতে চায়।

এসো চুপ করে শুনি এই বাণী স্তব্ধতার,
এই অরণ্যের তলে কানাকানি জলে স্থলে—
মনে করি হল বলা ছিল যাহা বলিবার।
হয়তো তোমার ভাবে তুমি এক বুঝে যাবে,
আমার মনের মতো আমি বুঝে যাব আর—
নিশীথের কণ্ঠ দিয়ে কথা হবে দুজনার।

মনে করি দুটি তারা জগতের এক ধারে
পাশাপাশি কাছাকাছি তৃষাতুর চেয়ে আছি—
চিনিতেছি চিরযুগ, চিনি নাকো কেহ কারে।
দিবসের কোলাহলে প্রতিদিন যাই চ’লে,
ফিরে আসি রজনীর ভাষাহীন অন্ধকারে—
বুঝিবার নহে যাহা চাই তাহা বুঝিবারে।

তোমার সাহস আছে, আমার সাহস নাই।
এই-যে শঙ্কিত আলো অন্ধকারে জ্বলে ভালো,