পাতা:মানসী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/৬৪

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৬২
মরণস্বপ্ন

চিরযুগরাত্রি ধ’রে শতকোটি তারা
পরে পরে নিবে গেল গগনমাঝার।
প্রাণপণে চক্ষু চাহি আঁখিতে আলোক নাহি—
বিঁধিতে পারে না আঁখিতারা
তুষারকঠিন মৃত্যু-হিম অন্ধকার।

অসাড় বিহঙ্গ-পাখা পড়িল ঝুলিয়া,
লুটায়ে সুদীর্ঘ গ্রীবা নামিল মরাল।
ধরিয়া অযুত অব্দ হুহূ পতনের শব্দ
কর্ণরন্ধ্রে উঠে আকুলিয়া—
দ্বিধা হয়ে ভেঙে যায় নিশীথ করাল।

সহসা এ জীবনের সমুদয় স্মৃতি
ক্ষণেক জাগ্রত হয়ে নিমেষে চকিতে
আমারে ছাড়িয়া দূরে পড়ে গেল ভেঙেচুরে,
পিছে পিছে আমি ধাই নিতি—
একটি কণাও আর পাই না লখিতে।

কোথাও রাখিতে নারি দেহ আপনার,
সর্বাঙ্গ অবশ ক্লান্ত নিজ লৌহভারে।
কাতরে ডাকিতে চাহি— শ্বাস নাহি, স্বর নাহি,
কণ্ঠেতে চেপেছে অন্ধকার।
বিশ্বের প্রলয় একা আমার মাঝারে।